অটিস্টিক শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান

0 0
Read Time:6 Minute, 8 Second

অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্নসহ সব বিশেষ শিশুকে সমাজের মূল ধারায় এনে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (০২ এপ্রিল) ‘১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২২’ উদযাপন অনুষ্ঠানে (ভার্চুয়াল) প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অটিজম আছে কিনা, এটা শুরুতেই যদি চিহ্নিত করা যায় তাহলে তাদের উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে বা তাদের সঙ্গে সেভাবে ব্যবহার করে অনেকটা সুস্থ করে তোলা যায়। এ চেষ্টা আমাদের রয়েছে।’

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা বিশ্বখ্যাত বেটহোফেন (জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ লুডভিগ ফন বেটোফেনের), ইলিয়টের (বিশ্ববিখ্যাত কবি ও লেখক টি. এস. এলিয়ট) কথা বলি অথবা আইনস্টাইনের (বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন) কথা বললেই বা স্টিফেন হকিং (ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং) যার কথাই আমরা বলি প্রত্যেকের মধ্যে কিন্তু এ ধরনের একটা অটিজমের সমস্যাটা ছিল। তারা কিন্তু সমাজে এমন কিছু দিয়ে গেছে। কোনো দিন আর কেউ এটা চিন্তাই করতে পারেনি তাদের ভেতরে এ ধরনের সমস্যা ছিল।’

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মানসিক বিকাশে সঠিক পরিচর্যা করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের ভেতরে একটা সুপ্ত প্রতিভা লুকায়িত আছে। সেটাকে বের করে নিয়ে এসে আমাদের সমাজে কাজে লাগাতে বা মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে পারলে তাদের জীবনটাও সুন্দর হবে। আবার এদের কেউ বোঝা মনে করবে না। এ জন্যই আমাদের সব সময় চেষ্টা, এরা যেন সঠিক পরিচর্যা পায়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরাও সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।’

‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং আমাদের নানামুখী কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের জাতীয় জীবনে মূল ধারায় নিয়ে আসা সম্ভব, এটা আমি বিশ্বাস করি।’

অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের আপন করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে মনে রাখতে হবে, এটা কোনো রোগ না। এক সময় ছিল শিশু যদি প্রতিবন্ধী হতো বা অটিজম হতো মানুষ তাকে লুকিয়ে রাখতো, পরিবার লুকিয়ে রাখতো, সামনে বলতে লজ্জা পেতো। তাদের সামনে আনলে অনেকে দেখে হয়তো এটা নিয়ে প্রশ্ন করতো। … একটা মানুষের জন্ম কীভাবে হয়েছে, তাকে তো আমরা অবহেলা করতে পারি না। তাকে আমরা ফেলে দিতে পারি না। তাদের আপন করে নিতে হবে।’

বিশ্বব্যাপী অটিজম সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলাতে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এইটুকু অন্তত বলবো সায়মা ওয়াজেদ যখন অটিজম নিয়ে কাজ শুরু করে তখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি জাতিসংঘে এটার ওপর রেজুলেশন নেয়। এ ধরনের কার্যক্রম করার ফলে আজকে শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশ্বেই কিন্তু এ বিষয়গুলো মানুষ সাধারণভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে।’

যৌথ পরিবারে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের বিকাশ ভালো হয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যৌথ পরিবারের কোনো শিশু যখন এ ধরনের কোনো সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতো, তারা অনেক ভাই-বোন, আত্মীয় পরিবার-পরিজন সবার সঙ্গে চলতে ফিরতে অনেক সময় এই সমস্যাগুলো স্বাভাবিকভাবে দূর হয়ে যেতো। এখন অবশ্য ছোট পরিবার, সুখী পরিবার হতে গিয়ে হয়তো একা একা এদের মেধা বিকাশেরও সুযোগ হয় না। আর সুস্থ হওয়াও হয় না।’

‘পারিবারিকভাবে আমি মনে করি, যত বেশি এরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে, স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গে, স্বাভাবিক ও একটি অটিজম শিশু একসঙ্গে যদি বড় হয় তার মধ্যে আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে অনেকটা ভালো হয়ে যায়। এ বিষয়টা সবাইকে চিন্তা করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধুমাত্র আলাদাভাবে ব্যবস্থা করলেই চলবে না। তবে হ্যাঁ, যারা একেবারে বেশিই মিশতে পারে না, তাদের জন্য আলাদা থাকবে। কিন্তু যত বেশি আমরা তাদের অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে সুযোগ করে দেবো। তত দ্রুত তারা সুস্থতা লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *