‘অসহায় লাগে, বাচ্চাদের দিকে তাকাতে পারি না’

0 0
Read Time:4 Minute, 52 Second

মাসুদ পারভেজ (৪০) ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। করোনায় চাকরি হারিয়ে ফিরে আসেন নিজ শহর বরিশালে। সামান্য পুঁজি আর ধারদেনা করে নগরের ফকিরবাড়ি রোডে রকমারি নিত্যপণ্যের দোকান দেন। যে রোজগার ছিল, তা দিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তাতে মাসুদের কপালে ভাঁজ পড়েছে।

গতকাল শনিবার সকালে তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। মাসুদ পারভেজ আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘বাচ্চারা প্রোপার ফিডিং (প্রয়োজনীয় খাবার) বঞ্চিত হচ্ছে। একজন বাবা হয়ে এটি করার অধিকার আমার নেই। কিন্তু কী করব? নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগে। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না।’

তিনি দৈনন্দিন ব্যয় সংকোচনের একটা হিসাব দেন। বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তার চারটি প্রাইভেট ছিল। এখন দুটিতে নামিয়ে এনেছেন। এ দুটিও সামনের দুই মাস চলবে। আবার পরীক্ষা ঘনিয়ে এলে দুই মাস পড়াবেন। মেজ মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আগে একজন ভালো শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট ছিল। সেটি এ মাস থেকে বাদ দিয়ে বাড়ির কাছে অর্ধেক বেতনে আরেকজন শিক্ষকের কাছে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তার গৃহশিক্ষক ছিল সেটিও এ মাস থেকে বাদ দিয়েছেন। তিন বাচ্চার সকালের নাস্তার বদলে ভাত। আর বিকেলের নাস্তা পুরোই বাদ দিয়েছেন। আগে প্রতি সপ্তাহে বাচ্চাদের বাইরে অথবা কোনো পার্কে ঘুরতে নিতেন, সেটিও এখন বন্ধ।

বাদের তালিকা দীর্ঘ। জীবন তো বাঁচাতে হবে, পুরোদস্তুর এখন
সংগ্রাম করছি টিকে থাকার। কিন্তু তাতে কুলাচ্ছে না, আরও
কমাতে হবে, খাত খুঁজছি।
মাসুদ পারভেজ, বেসরকারি চাকরিজীবী, বরিশাল

মূল্যবৃদ্ধির আঁচ পড়েছে মাসুদদের রান্নাঘরেও। আগে মাসে ছয় লিটার ভোজ্যতেল লাগত, এখন কিনছেন তিন লিটার। সপ্তাহে পাঁচ দিন মাছ-মাংসের বদলে বেশিরভাগ দিনই পাতে থাকছে সবজি, ডাল, আলুভর্তা। আগে মিনিকেট চাল খেতেন, এখন মোটা চাল কিনছেন।

মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘বাদের তালিকা দীর্ঘ। জীবন তো বাঁচাতে হবে, পুরোদস্তুর এখন সংগ্রাম করছি টিকে থাকার। কিন্তু তাতে কুলাচ্ছে না, আরও কমাতে হবে, খাত খুঁজছি। বুঝাতে পারব না।’

দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য কয়েক মাস ধরেই চড়া। হঠাৎ জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে জীবনযাপনে সব ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সীমিত আয়ের মানুষের।

বরিশাল নগরে আগে রিকশায় কাছাকাছি দূরত্বে যেতে ১০ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন তা ২০ টাকা। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আগের ন্যূনতম ভাড়া পাঁচ টাকা ছিল। গতকাল শনিবার অটোরিকশাগুলোর সামনে স্টিকার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা’।

নগরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এক নারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, বেতন তো বাড়েনি। কিন্তু প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করতে পরিবহনে ব্যয় হতো ৪০ টাকা, এখন সেখানে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। ছেলের স্কুলের বেতন, বাড়িভাড়া সবকিছু মিলিয়ে এখন পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। পণ্যমূল্য, জীবনযাপনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ছেলের দুধ-ডিমে, শিক্ষায়। রান্নাঘরে গেলে এখন বুকটায় হাহাকার করে ওঠে। মানুষের এ হাহাকার কে শুনবে?

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *