গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের রূপরেখা খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই কথা জানান।
‘গ্রহনযোগ্য নির্বাচন সংকটের একমাত্র সমাধান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বৃহত্তম জোটের শীর্ষ দল বিএনপি এই ভাবনাকে (জাতীয় ঐক্য) কেন্দ্র করে একটা বক্তব্য বা বিবৃতি যার মধ্য দিয়ে সবাই একত্রিত হবে এবং আগামীদিন পথে চলবে। আমার মনে হয় সেই প্রচেষ্টা ও ভাবনা আমাদের মধ্যে চলমান।
যেকোনো মুহুর্তে আমরা জাতির সামনে সেটা উপস্থাপিত করবো।
তিনি আরো বলেন, সঙ্গত কারণেই উপস্থাপকের প্রশ্ন আসতে পারে যে, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বন্দি- এই ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নাই এবং তার অবর্তমানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের সামনে সেই আহবান দেবেন এবং আগামী দিনে আন্দোলনের রূপরেখা উপস্থাপন করবেন। এই ব্যাপারে (আন্দোলনের রূপরেখা) আমাদের প্রস্তুতি শেষ প্রান্তে।
এলডিপির একাংশের সভাপতি আবদুল করীম আব্বাসীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
গয়েশ্বর বলেন, আমাদের পথ চলার ক্ষেত্রে সবাইকে এক সঙ্গে যেটা যেটা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উক্তি ছিলো গত কাউন্সিলে যে-নানান মানুষ নানা মত, দেশ বাঁচাতে ঐক্যমত। আমার মনে হয় যে, আমাদের নানান ভাবনা থেকে একটাই ভাবনা হচ্ছে, আমরা একটা মাথা উঁচু করে এক পথেই চলব, আমরা একথায় একভাবে চলব।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির মধ্যে যখন সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে উঠবে তখনই পরাশক্তি বা ষড়যন্ত্রকারীরা দুর্বল হবে। আর জাতীয়তাবাদী শক্তি যখন খন্ড-বিখন্ড থাকে তখন সুবিধাবাদী শক্তি শক্তিশালী হবে, লুটপাট বাড়বে, দুর্নীতি বাড়বে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের শরিকদের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, অনেক দলের চলমান সংকট উত্তরনের পথে নানামুখী ভাবনা বা নানামুখী দিক নির্দেশনা থাকতে পারে। কিন্তু সরকারের যে ফ্যাসিবাদী চরিত্র, তাদের কর্মকান্ড খুব দ্রুত তাদেরকে একত্রিত করেছে সবাই সবার ভাবনা ত্যাগ করে একভাবে এক পথে চলতে চায়। আমি গত এক মাসের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য থেকে অনুমান করছি বিরোধী দলের নেতারা গত এক মাসে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন এখন তা না দিয়ে একটা জাতীয় ঐক্যকে নিশ্চিত করার মাধ্যমে অনেকেই তা খুব একমতের কাছাকাছি এবং হাটাচলা করছেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কী চাচ্ছি? এই সরকারের পতন চাচ্ছি। এই যে সংসদ আছে তা বাতিল করতে হবে, এটা সংসদ চলতে পারবে না।
আমাদের স্পষ্ট কথা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।
আমরা আন্দোলনে আছি। এখন প্রশ্ন হলো এই আন্দোলনের গতিটা এই সরকারের পতনের জন্য যথেষ্ট না। এর গতিটা বাড়াতে হবে। সুতরাং আন্দোলনের পরিবেশ-পরিস্থিতি যুদ্ধ ক্ষেত্রে যেমন পেছানোর নিয়ম আছে সামনে যাওয়ারও নিয়ম আছে। আর যুদ্ধ ক্ষেত্রে যখন পেছানো যায় সেটা পরবর্তী আক্রমনের জন্য প্রস্তুতি হয়। এটাই আন্দোলন বলেন, যুদ্ধ ক্ষেত্রের কৌশল। এখন আমাদের কৌশল হচ্ছে আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় বাধা শেখ হাসিনা। তাকে সরাতে হবে তারপরে নির্বাচন। এটাই বিএনপির কথা। একই সঙ্গে আমি বলতে চাই, শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি যেমন নির্বাচনে যাবে না সেটা যেমন ঠিক, তেমনি এটা ঠিক- বর্তমান সরকারের অধীনে যেনোতেনো নির্বাচন হতেও দেবে না বিএনপি।
এই অনুষ্ঠানে এলডিপি (অলি আহমেদ) অংশের সহসভাপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, উপদেষ্টা ফরিদ আমিন, যুগ্ম মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিঠু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মো. ইব্রাহিম রওনক, গণতান্ত্রিক যুব দলের সাইফুল ইসলাম বাবু, মোহাম্মদ ফয়সাল, গণতান্ত্রিক ওলামা দলের মাওলানা বদরুদ্দোজা, মাওলানা আবদুল হাই নোমান, মহানগর দক্ষিনের এএসএম মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ২১৫ জন নেতা-কর্মী এলডিপি (আবদুল করীম আব্বাসী) যোগ দেন।