‘ড্রাইভার সাব, আমার স্বামীরে আপনি মাইরেন না। আপনার পায়ে ধরি। ধর্মের বাপ ডাইক্যা বলতেছি, ওরে আপনি মাইরেন না।’ স্বামী ছালাউদ্দিনকে মহাসড়কে বাসের চাকায় পিষে মারার আগে চোখের জলে এভাবেই অনুনয়-বিনয় করেছিলেন পারুল আক্তার। তবে তার এ বুকফাটা কান্নায় মন গলেনি চালক ও তার সহকারীর। তাদের বর্বরতার শিকার হতে হয় অসহায় ওই দম্পতিকে। আলম এশিয়া পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ছালাউদ্দিন। ঘটনার প্রতিবাদ করে পারুলও মারধরের শিকার হন।
রোববার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সদরের বাঘেরবাজার এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে
নিহতের স্ত্রী পারুল আক্তার জানান, শুক্রবার ঈদের ছুটিতে স্বামীকে নিয়ে ময়মনসিংহে বাবার বাড়ি যান। রবিবার সকালে স্বামীকে নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজারের ভাড়া বাড়িতে ফিরতে ময়মনসিংহ থেকে ‘আলম এশিয়া’ বাসে ওঠেন। পথে বাসের ভাড়া নিয়ে স্বামীর সঙ্গে হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বাসের ভেতরেই স্বামী সালাহ উদ্দিনকে মারধর করেন বাসের হেলপার। মারধরের ঘটনাটি মুঠোফোনে বাঘের বাজার এলাকার স্বজনদের অবহিত করেন সালাহ উদ্দিন।
বাসটি বাঘের বাজারে পৌঁছালে সালাহ উদ্দিন নেমে বাসের গতিরোধের চেষ্টা করেন। এ সময় সালাহ উদ্দিনকে চাপা দিয়ে চালক দ্রুতগতিতে বাসটি নিয়ে ঢাকার দিতে চলে যায়।
পারুল আক্তার বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন যখন গাড়ি থেকে নেমে যান তখন আমি নামতে চাইলে হেলপার বাধা দেন। পরে আমাকে নিয়ে বাসটি চলতে শুরু করে। এ সময় কান্নাকাটি শুরু করলে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া ফু-ওয়াং কারখানার সামনে নিয়ে বাসের গতি কমিয়ে আমাকে ফেলে দেয় হেলপার।’
মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানা পুলিশের সহায়তায় বাসটি আটক করা হয়। নিহতের মরদেহ ময়ানতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে বাসের চালক ও তার সহকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা যায়নি।