ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি মোকাবিলায় কোন পথে পশ্চিমারা?

0 0
Read Time:10 Minute, 31 Second

নতুন আইনের মাধ্যমে ইউক্রেনের বিদ্রোহী অঞ্চলে নিজের নিয়ন্ত্রণ সুরক্ষিত করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে রাশিয়া। এই আইনে ইউক্রেনে রুশ বাহিনী মোতায়েনের অনুমতি দেওয়া হবে। এমন সময়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো যখন পশ্চিমা দুনিয়া যখন মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শিগগিরই নতুন এই আইনে অনুমোদন দিতে পারে ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্ট। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার একদিনের মাথায় এই আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আশঙ্কা, আইনটিকে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রুশ পদক্ষেপের জন্য একটি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হতে পারে।

পূর্ব ইউক্রেনে সাঁজোয়া যানের বহর

সোমবার গভীর রাতে পুতিন ডিক্রিতে স্বাক্ষর করার পরপরই সাঁজোয়া যানের বহরকে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল প্রদক্ষিণ করতে দেখা গেছে। তবে এই বহর রাশিয়ান কিনা, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রায় আট বছরের পুরনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংঘাতের পর ইউক্রেনের বিদ্রোহী অঞ্চলগুলোকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয় পুতিন প্রশাসন। ওই সংঘাতে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তছনছ হয়ে গেছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প কেন্দ্র ডনবাস। পুতিনের সর্বশেষ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে দুনিয়ার বহু দেশ।

রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলের কয়েক সপ্তাহের মাথায় বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে এই সংঘাত দেখা দিতে শুরু করে। কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের অভিযোগ, রুশ বাহিনীর সদস্য এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ যোগাচ্ছে রাশিয়া। তবে এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মস্কো। সোমবার পুতিন এই বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকেই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন। এর ফলে এখন প্রকাশ্যেই সেখানে রুশ বাহিনীর মোতায়েনের সুযোগ পাবে ক্রেমলিন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, রাশিয়া ইউক্রেনের ডোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তারা এসব অঞ্চলে বর্তমানে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখণ্ডেও নজর দিতে পারে।

কী বলছে ইউক্রেন?

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশবাসীর উদ্দেশে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে বা কিছুকে ভয় করি না। আমরা কাউকে কিছু ছেড়ে দেবো না।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।

রাশিয়ার স্বীকৃতি পাওয়া ইউক্রেনের দুই অঞ্চলে এরইমধ্যে নির্বাহী আদেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই দুই অঞ্চলে যেকোনও ধরনের বিনিয়োগ, বাণিজ্য বা অন্য কোনও ধরনের লেনদেনের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইউক্রেনে হামলা চালালে মস্কোর বিরুদ্ধে যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছিল এই নিষেধাজ্ঞা তার চেয়ে আলাদা।

যুক্তরাজ্যের অবস্থান

অন্য পশ্চিমা দেশগুলোও নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মঙ্গলবার বলেছেন যে, যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘অবিলম্বে’ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। তিনি সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেন, ইউক্রেনে পুতিনের পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের পরিণাম হবে অত্যন্ত বিপর্যয়কর।

বরিস জনসন বলেন, পুতিন ‘আন্তর্জাতিক আইন সম্পূর্ণভাবে ছিঁড়ে ফেলেছেন‌’। আর ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞায় কেবল ডোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকেই টার্গেট করা হবে না বরং ‘আমরা যতটা সম্ভব রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবো।’

ইউক্রেনে প্রবেশ করেছে রুশ বাহিনী

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘রুশ সেনারা ডনবাসে প্রবেশ করেছে। আমি এটিকে পূর্ণ মাত্রার দখল বলবো না। তবে রুশ সেনারা ইউক্রেনের মাটিতে রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

পোলিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিউস ব্লাসজ্যাক মঙ্গলবার এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। এটিকে ইউক্রেনের সীমান্ত এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

ইউক্রেন এবং পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, বিদ্রোহী অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার স্বীকৃতির ফলে ২০১৫ সালের শান্তি চুক্তি ভেঙে পড়েছে। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, মস্কো মিনস্ক চুক্তির কোনও পক্ষ নয়। তবে ইউক্রেন চাইলে ওই চুক্তি এখনও বাস্তবায়িত হতে পারে।

২০১৫ সালের চুক্তিটি ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সামরিক পরাজয়ের পর ইউক্রেনকে রাশিয়ার কূটনৈতিক অভ্যুত্থানের বাস্তবতায় বিদ্রোহী অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক স্বশাসনের প্রস্তাব দিতে হয়েছিল। ইউক্রেনে অনেকেই এই চুক্তিকে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং দেশের অখণ্ডতার ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করে। শেষ পর্যন্ত এর বাস্তবায়নও স্থবির হয়ে পড়েছে।

পশ্চিমাদের দায়ী করছেন পুতিন

ঘণ্টাব্যাপী টেলিভিশন ভাষণে বর্তমান সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দায়ী করেন পুতিন। একইসঙ্গে তিনি ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টাকে রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার ভাষায়, ‘ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।’

রাশিয়া বলছে, তারা পশ্চিমা দুনিয়ার কাছ থেকে এমন গ্যারান্টি চায় যে, ইউক্রেন এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশগুলোকে ন্যাটো জোটে নেওয়া হবে না।

পুতিন সোমবার বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ওপর একটি সাধারণ স্থগিতাদেশই যথেষ্ট নয়। মস্কো ন্যাটোকে ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন বন্ধ করা এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে তার বাহিনীকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। যদিও এমন দাবি পশ্চিমারা আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে।

পুতিন সোমবার সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছেন, পশ্চিমা রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করলে নিজের নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার মস্কোর রয়েছে। ইউক্রেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট শাসকদের দেওয়া রাশিয়ার ঐতিহাসিক ভূমি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে বলেও দাবি পুতিনের। এপি অবলম্বনে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *