‘উচিত শিক্ষা’ দিতে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় : র‌্যাব

0 0
Read Time:6 Minute, 36 Second

রাজধানীর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবে উচ্চ শব্দে গান ও অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
সোহেল চৌধুরী হত্যাকান্ডের ২৪ বছর পর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এই মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।
আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান।
খন্দকার আল মঈন জানান, ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলামসহ সবাই সোহেল চৌধুরীকে উচিত শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাগবিতন্ডতা ও হাতাহাতি হয়। তাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই, আশিষ রায় চৌধুরী ও বান্টি ইসলাম। এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে। ইমন ও তার লোকজন মিলে চিত্রনায়ক সোহেলকে গুলি করে হত্যা করে। 
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আশিষ রায় জানিয়েছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর কানাডায় পালাতে চেয়েছিলেন তিনি। গ্রেফতারের সময় জব্দ করা হয় ২৩ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, একটি আইপ্যাড, ১৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, দুটি আইফোন ও নগদ দুই লাখ টাকা।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, আশিষ ও বান্টি ইসলাম বাল্যকাল থেকে বন্ধু। ১৯৯৬ সালে আবেদীন টাওয়ারে তারা দুজনে ট্রাম্পস ক্লাবটি করেন। সেখানে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ হতো। ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদ ভাই-এর অনুসারী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ছিল। বান্টি ইসলাম ছিল আজিজ মোহাম্মদের ভাতিজির স্বামী। বিভিন্ন অপকর্মের পরিকল্পনা হতো এই ক্লাবে। ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই এই ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বিভিন্ন ইস্যুতে বাকবিতন্ডতা ও হাতাহাতি হয়। এরপর আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলাম সোহেল চৌধুরীকে শিক্ষা দিতে চান। এজন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত শেষ রাতে সোহেল চৌধুরী গুলশানের ট্রাম্পস ক্লাবে যান। তখন সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনসহ অন্যরা। সেখানে আদনান সিদ্দিকীও ছিল। তারা   ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায় আরও  কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে যায়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দাযের করেন। মামলা নম্বর-৫৯। পরে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
র‌্যাব  জানায়, ২০০১ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। তবে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলার এক নম্বর আসামি আদনান সিদ্দিকী দুই বছর পর হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। পরে হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট পুনরায় আরেকটি রায় দেন। এ রায়ে আগের জারি করা রুলটি খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রত্যাহার করা হয় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ। আদালত চলতি বছরের ২৮ মার্চ তাদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ফলে র‌্যাব এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
চলতি বছরের ২৮ মার্চ আশিষ রায় চৌধুরীর নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে তিনি ৭ এপ্রিল দেশ ছেড়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তার আগেই রাজধানীর গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে তাকে  গ্রেফতার করা হয় বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা। 
গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এসময় র‌্যাব সদরদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা, র‌্যাব-১০ এর কর্মকর্তা সহ অন্যান্য র‌্যাবের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *