একটি ডেন্টাল চেয়ারের দাম সাড়ে ৫৬ লাখ টাকা!

0 0
Read Time:6 Minute, 38 Second

দুই কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পাঁচটি ডেন্টাল চেয়ার কিনেছে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি চেয়ারের দাম পড়েছে সাড়ে ৫৬ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই কেনাকাটা করা হয়। অথচ একই সময়ে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ডেন্টাল চেয়ার কিনেছে ১৮ লাখ টাকা করে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজের এই কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে সরকারের অডিট অধিদফতর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেশি দামে চেয়ার কেনার সপক্ষে যৌক্তিক কোনও জবাব দেয়নি। ফলে সম্প্রতি অভিযোগগুলো চূড়ান্ত করেছে অডিট অধিদফতর।

অডিট নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘থ্রি আই মার্সেন্ডাইজ’কে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে ৫টি ডেন্টাল চেয়ার কেনা বাবদ ২ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ প্রায় একই সময়ে প্রকল্পের একই লাইন ডাইরেক্টরের নিয়ন্ত্রণাধীন দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজের জন্য প্রতিটি চেয়ার ১৮ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রংপুর মেডিক্যাল এবং দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কেনা চেয়ারের স্পেসিফিকেশন নমুনা এবং কান্ট্রি অব অরিজিন একই ছিল। অথচ একই মানসম্পন্ন পাঁচটি ডেন্টাল চেয়ার কেনা বাবদ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ সরবরাহকারীকে অতিরিক্ত এক কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার পরিশোধ করেছে। প্রসঙ্গত, এই কেনাকাটার সময় রংপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ছিলেন প্রফেসর ডা. আব্দুর রউফ।

এই অনিয়মের কারণ হিসেবে অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে—‘সরকারি ক্রয়নীতি অনুযায়ী ক্রয় পরিকল্পনা করার আবশ্যকতা থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়া পিপিআর-বিধি অনুযায়ী টেন্ডার ওপেনিং কমিটি গঠন করার নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি। ক্রয়কৃত চেয়ারের স্পেসিফিকেশন নমুনা এবং কান্ট্রি অব অরিজিন একই হওয়া সত্ত্বেও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে ক্রয় করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—‘‘দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ডেন্টাল চেয়ার কেনার জন্য ‘বাজারদর যাচাই কমিটি’ গঠন করে। ওই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিটি ডেন্টাল চেয়ারের দাম ছিল ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ‘বাজারদর যাচাই কমিটি’ গঠন করলেও ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বাজারে চেয়ার সরবরাহ না থাকার কথা উল্লেখ করে।’’

অনিয়মের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দিনাজপুর মেডিক্যাল এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজে সরেজমিনে তদন্তকালে প্রাপ্ত দলিলাদি যাচাই-বাছাই করে কমিটির প্রতীয়মান হয় যে, উভয় মেডিক্যাল কলেজ কেনাকাটার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

সরকারের আর্থিক ক্ষতির বিষয় উল্লেখ করে অডিট অধিদফতর থেকে প্রথমে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। জবাব না পাওয়ায় ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ফের তাগাদাসহ চিঠি পাঠানো হয়। এবারও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই চিঠির বিষয়ে নীরবতা পালন করে। এরপর ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অনিয়মের বিষয়ে জবাব চেয়ে পুনরায় চিঠি দেওয়া হয়। তারও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

এদিকে, রাজধানীতে মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি বিক্রির বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে একটি ডেন্টাল চেয়ার সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকায় পাওয়া যায়। একটি চেয়ারের দাম ১৮ লাখ বা সাড়ে ৬৫ লাখ টাকাকে অস্বাভাবিক বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমাদের চেয়ারগুলোর পাঁচ বছর ওয়ারেন্টি ছিল। আর দিনাজপুর মেডিক্যালের চেয়ারগুলোর ওয়ারেন্টি ছিল না। আর তখন দিনাজপুর যে এত কম দামে চেয়ার কিনেছে, সেটা জানা যায়নি। তাছাড়া এটা চূড়ান্ত করার সময় তো ইঞ্জিনিয়াররা ছিলেন। আমাদের চেয়ারগুলো এখনও ভালো রয়েছে।’

অডিটের সুপারিশ অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %