দেশের জেলা, উপজেলাসহ সরকারি হাসপাতালগুলোকে সেন্ট্রালি সুপারভিশনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেছেন, ক্রমান্বয়ে সব হাসপাতাল ডিজিটালাইজড হবে। কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ সরকারের বিনা মূল্যে দেয়া সেবা না পেয়ে অন্যত্র বেশি অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হয়।
এটি আর চলতে দেয়া যাবে না। দ্রুতই হাসপাতালগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে সেন্ট্রালি নজরদারিতে রেখে জনগণের সঠিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি হাসপাতালেই এক্স-রে মেশিনসহ সব ধরনের যন্ত্রপাতি নিশ্চিত থাকার কথা। অথচ সরকারি হাসপাতালের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে পরীক্ষা করানো হয়। এতে সরকারি অর্থে কেনা মেশিনগুলো অকেজো হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, কোভিডকালীন দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়া গেছে বলেই কোভিডে বর্তমানে দেশ এতটা ভালো অবস্থায় আছে। চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ গোটা দেশবাসী কোভিড নির্মূলে একযোগে একে অপরকে সহায়তা করেছে।
তবে, এর মাঝেও টেলিমেডিসিন সেবা বৃদ্ধি, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, আইসিইউ সংখ্যা বৃদ্ধি, সময়মতো ভ্যাকসিন আনা, টাকার জোগান দেয়া, ভ্যাকসিন সোর্স বের করাটাও কোভিড নির্মূলে কম ভূমিকা রাখেনি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবিলায় এ পর্যন্ত ১ম ডোজ ১৩ কোটি, ২য় ডোজ ১১ কোটিসহ লক্ষ্যমাত্রার ৯৬ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব হয়েছে। এখনো হাতে ৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে এবং পাইপলাইনে আরো ৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে। এখন দেশের অবশিষ্ট মানুষগুলো ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে দেশ আরো বেশি উপকৃত হবে। এসব কথা বিবেচনা করে গণটিকা কার্যক্রম আরো ৩ দিনের জন্য বর্ধিত করা হলো। এখন থেকে গণটিকা কার্যক্রম ৩ এপ্রিল পর্যন্ত আগের নিয়মে চলমান থাকবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৩ বছরে দেশের হাসপাতালগুলোতে নতুন প্রায় ৮০০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৪৫০টি জিপ গাড়ি দেয়া হয়েছে বলে সভায় এ সময় জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশের করোনা সংকটেও প্রায় ১০ হাজার চিকিৎসক, ১৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়াসহ প্রায় ১০০টি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মাত্র ১টি টেস্টিং ল্যাব থেকে সাড়ে ৮০০ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৪-৫টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন হাসপাতাল থেকে এখন ১৩০টিরও বেশি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিটোর হাসপাতালে ৫০০ বেড, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫০০ বেড, এনআইসিবিডি-তে প্রায় ৮০০টি নতুন বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ, ৮ বিভাগে ৮টি উন্নত হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো কাজ স্বাস্থ্য খাতকে আরো গতিশীল করবে।
১০টি ক্যাটাগরিতে ৪৭টি পুরস্কার: অনুষ্ঠানে ১০টি ক্যাটাগরিতে ৪৭টি পুরস্কার দেয় হয়। এর মধ্যে সেরা ১০টি উপজেলা হাসপাতাল, সেরা ৫টি জেলা হাসপাতাল, সেরা ৩টি মেডিকেল কলেজ, সেরা ২টি বিশেষায়িত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং সেরা ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম. আবদুল আজিজসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।