গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে ছাড় দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

0 0
Read Time:6 Minute, 28 Second

বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি জানান, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন বাস্তবায়নের দায়িত্ব পুরোটাই বাংলাদেশের। পাশাপাশি মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য র‌্যাবের জবাবদিহি ও সংস্কার চায় যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।

 

আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে পিটার হাস বলেন, সম্প্রতি আমি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্বের কথা বলছি, যেন বাংলাদেশের জনগণ অবাধে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে কীভাবে কাজ করবে সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের জনগণ, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কাজ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি গণমাধ্যম বিষয়ক বেশ কয়েকটি খসড়া আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করতে পারে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্পষ্ট করেছেন যে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি জনসমক্ষে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র তুলে ধরেছে।

 

এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। র‌্যাব ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেটা তারই ফল। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের কী কী উদ্যোগ নেওয়া দরকার জানতে চাইলে পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দুটি জিনিস চাইছে সম্ভাব্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে র‌্যাবের জবাবদিহিতা এবং সেই অপব্যবহারের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সংস্কার। র‌্যাবের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুরাহায় সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা ও বাহিনীটিকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার আইন মেনে চলা ছাড়া র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।

সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবকে কার্যকর একটি বাহিনী হিসেবে দেখতে চায় বলেও জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়া এবং উন্নয়নবিষয়ক তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা পেতে হলে পূর্ণাঙ্গ শ্রম অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাস্তবায়ন করতে হবে মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, আগামী ২ জুন ওয়াশিংটনে দুই পক্ষের মধ্যে অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ অনুষ্ঠান হবে। সেখানে শ্রম অধিকার গুরুত্ব পাবে। শ্রীলঙ্কার চলমান অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তুলনা প্রসঙ্গে পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশ কিন্তু শ্রীলঙ্কা নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি তার নিজের মতো। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট ভালো করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেশ ভালো। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে এর শর্তগুলো কেমন তা নিয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট সচেতন। বাংলাদেশের ঋণের ক্ষেত্রে চীনের হার তুলনামূলকভাবে বেশ কম। পিটার হাস আরও বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের বড় অংশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক ও জাপান। তাই শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে না এমনটা নয়।

ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *