গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত থাকলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার পানি এখনও নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩২৮ জন। বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সংকট, স্যানিটেশনের অব্যবস্থপনাসহ গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি ভাবে যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। সেই সঙ্গে ফুটে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। গত ২২ জুলাই সোমবার সকালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২১ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার, শহরের ব্রিজরোড় পয়েন্টে ঘাঘট নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপরে বইছে। এছাড়া করতোয়া নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি না পেলেও এখনও বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ,ফুলছড়ি, সাঘাটা, পলাশবড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ও ৩ টি পৌরসভার ৩৮৩টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩২৮ জন। ৪৪ হাজার ৭৯২টি বসতবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১৮০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭৪ হাজার ১০৪ জন অসহায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ হাজার ৮৩৩ হেক্টর জমির ফসল। ভেসে গেছে অন্তত ৩শ পুকুর ও খামারের মাছ। পানির প্রবল চাপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কাঁচাপাকা প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা। ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৮টি। এদিকে জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যা পরিস্থিতির কারণে সাত উপজেলার ৩৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ২৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চারটি কলেজ রয়েছে। বন্ধ থাকা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিকাংশই দুর্গম চরে অবস্থিত। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন বলেন এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ১৫০ মে. টন চাল, ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৬ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে। সেখান থেকে ইতোমধ্যে ৯৫০ মে. টন চাল, ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৫ হাজার ৬শ শুকনো খাবার দুগর্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ কাজ চলছে।