মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ ২৬ মার্চ। বাঙালি জাতির জীবনে অনন্যসাধারণ একটি দিন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় দিনটি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতারের আগমুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
একাত্তরের ২৫ মার্চের মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে এক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল দেশের মানুষ। ওই দিন দিবাগত রাতেই (একাত্তরের ২৫ মার্চ) গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। তার আগেই বার্তা পাঠিয়ে দেন স্বাধীনতার ঘোষণার। এরপর গঠিত হয় প্রবাসী সরকার। তাদের নেতৃত্বে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ।
সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র তৃতীয় খন্ডে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের এই ঘোষণা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয় ২৫ মার্চ মধ্য রাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি। যা তৎকালীন ইপিআর এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে, ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১। ’
বঙ্গবন্ধুর ডাকে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, ৩ লাখ নারীর সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে। গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে এ দিনটি যেভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি। এবার আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল নানা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ২৬ মার্চ (শনিবার) সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৬ মার্চ বাঙালির আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল, ত্যাগ ও বেদনায় মহীয়ান একটি দিন। নিপীড়িত, বঞ্চিত ও শোষিত মানবের মুক্তির স্বপ্নসাধ পূরণের মহিমায় অমর এ দিন। জাতীয় ঐক্য এবং দেশপ্রেমের অনুভূতিতে গরীয়ান একটি দিন স্বাধীনতা দিবস। প্রতিবছর এ দিনটি আমরা পালন করি আনন্দে, শ্রদ্ধায়, ভক্তিতে এবং জাতীয় চেতনায় উদ্বেলিত হয়ে।
পাশাপাশি আমরা আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের অবয়বটি দেখতে চেষ্টা করি মনের আর্শিতে। আত্মজিজ্ঞাসায় আমরা হই জর্জরিত। আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করি দেশকে এগিয়ে নিতে।