২৮ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি- ২০ দিন পার হলেও এখনও ‘সগৌরবে চলিতেছে’ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী নানা কাণ্ড! কথাটা নেটিজেনদের। নির্বাচনকে ঘিরে একের পর এক নানা বিষয় উঠে আসায় দর্শকরা এভাবেই তকমা দিচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্পীদের ভোট প্রসঙ্গে।
যার সর্বশেষ তথ্য হলো, অভিমান ভেঙে সমিতির পদে ফিরছেন জায়েদ খান প্যানেলের রোজিনা। অন্যদিকে, আগামীকাল ২০ ফেব্রুয়ারি আবারও হচ্ছে শপথ। এবার এটা নেবেন নিপুণ প্যানেলের মামনুন ইমন। এদিকে, জায়েদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত চিত্রনায়িকা অঞ্জনা কিছুটা যেন চাপে পড়েছেন। কারণ দলছুট হয়ে একা একাই মিশা-জায়েদ প্যানেলের বাইরে এসে নিয়েছিলেন শপথ।
প্রথমেই শুরু করা যাক ইমনকে নিয়ে। ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদের এই তারকা জানালেন, আগামীকাল সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে তিনি নেবেন শপথ। পেশাগত ও পারিবারিক কাজে এই চিত্রনায়ক এতদিন তা নিতে পারেননি।
ইমন বললেন, ‘নির্বাচনের আগ দিয়ে সব কাজ বন্ধ রেখে এফডিসিতে টানা সময় দিয়েছিলাম। সেই কাজগুলোর শিডিউল ভোটের পর দিতে হয়েছে। তাই টানা কাজ করেছি। এরমধ্যে পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমাকে ঢাকার বাইরেও যেতে হয়েছিল। সবমিলিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তবে সুখের কথা আগামীকাল ২০ তারিখ শপথ নিয়েই একুশের প্রহরে ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে যাবো।’
১৮৫ ভোটে মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন একসময়ের নায়িকা রোজিনা। তবে জায়েদ-নিপুণের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের নানা ঘটনার মধ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বরাবর ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন অভিনেত্রী। জানিয়েছিলেন, ব্যক্তিগত কারণে তিনি আর কার্যকরী পদে থাকতে চান না। তবে সম্প্রতি মিশা-জায়েদ প্যানেলের বিজয়ী সদস্যরা হোটেল রেডিসনে ব্লুতে নৈশভোজে মিলিত হয়। এরপরই পদত্যাগপত্রসহ অনেক সিদ্ধান্তই বদলে গেছে।
রোজিনা বলেন, ‘আমি একজন শিল্পী। মাঝখানে খুব বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি দেখে। সামান্য একটা পদ নিয়ে মামলা পর্যন্ত হলো। এটা আমার পুরো অভিনয় জীবনে দেখিনি। পাশের বাসার মানুষও আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন শিল্পী সমিতিতে এসব কী হচ্ছে! আমি লজ্জায় মরে যাই। তাই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ডিপজল, আলীরাজ ভাইসহ কয়েকজন শিল্পী আমাকে বুঝিয়েছেন। তারা বলেছেন আমাকে যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে। ’
জানা যায়, তার পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়নি। তারপরও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রত্যাহারের চিঠি দেবেন।
অন্যদিকে, অঞ্জনা রয়েছেন কিছুটা টেনশনে।
সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ ও নিপুণের দ্বন্দ্ব এবং আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই ১৬ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন অঞ্জনা। যেহেতু তিনি মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, সেহেতু তার এই শপথের মধ্য দিয়ে শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। বিষয়টি নিয়ে নিজ প্যানেলের বিজয়ীদের কাছে কিছুটা সমালোচিতও হন। এ কারণে নতুন করে শপথ নিতে চান বলে মন্তব্য করেছেন এই তারকা।
বিষয়টি নিয়ে মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে আন্তর্জাতিক পদে নির্বাচিত জয় চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমত, রোজিনা আপার পদত্যাগ গৃহীত হয়নি। কারণ এটা জমা দিয়ে রিসিভ কপি নিতে হয়। তিনি তা নেননি। অন্যদিকে, অঞ্জনা আপার শপথগ্রহণকে আমরা আলাদাভাবে দেখছি না। নিপুণ বা জায়েদ খান যেই আমাদের সাধারণ সম্পাদক হন, শপথ তো নিতেই হবে। তারপরও অঞ্জনা আপা আমাদের সঙ্গেও শপথ নেবেন বলে ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন। একবার যদিও নিয়েছেন, তারপর তা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তিনি আবার তা নিতে চেয়েছেন।’
জয় আরও জানান, তাদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সহসভাপতি নায়ক রুবেল সম্প্রতি পদত্যাগের কথা জানালেও এখন সেই সিদ্ধান্ত থেকে খানিকটা পিছিয়ে এসেছেন। সূত্র বলছে, মিশা-জায়েদ দুজনেই চান নির্বাচিতরা ভোটারদের সম্মান সমুন্নত রাখুক। কেউ পদত্যাগ না করুক।
এই বিষয়ে খানিকটা দ্বিধান্বিত লড়াকু নায়ক রুবেল।
প্রসঙ্গত, সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে কাঞ্চন-নিপুণ ও মিশা-জায়েদ পরিষদের মধ্যে প্রকাশ্যে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গত ২৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পীদের দ্বিবার্ষিক এই নির্বাচনে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর আপিল বোর্ড জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে একই পদে জয়ী ঘোষণা দেয়। তাই পদটি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তারা। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি যার শুনানি হবে আদালতে।