বৃহস্পতিবার, ০৭ মে :করোনাভাইরাস জনিত রোগের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবরা নিশ্চিতে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। স্থানীয় মূদ্রায় যা ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (৮৫ টাকা প্রতি ডলার হিসাবে)।
বৃহস্পতিবার ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এডিবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ ধন্যবাদ জানান তিনি।
জানা গেছে, সম্প্রতি এডিবির ঋণ সহায়তায় একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। ওই প্রকল্পে ১০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল সংস্থাটি। এরপর এডিবি নতুন করে এই ঋণ অনুমোদন দিল।
এডিবির ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঋণের সুবিধা পাবে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। এখন প্রায় ১৫ লাখ পোশাককর্মীকে বেতন প্রদান এবং করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় থাকা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা প্রদানও অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। দেশের ২০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে প্রায় ২ হাজার টাকা (২৩ মার্কিন ডলার) এবং প্রায় ১০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে ২০ কেজি করে খাবার সহযোগিতা দিতে পারবে সরকার।
সেই সঙ্গে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও স্বল্প সুদে সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে এই ঋণ ভূমিকা রাখবে। দরিদ্র ও খুবই অরক্ষিত বিশেষ করে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন ও করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের সবার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করব।’
এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশকে এডিবি আরও ৫০কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। যা ঢাকায় এডিবির কার্যালয় অর্থমন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছে। এডিবির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোন আলাপের পরে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই ঋণ অনুমোদন করায় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়াকে তাৎক্ষণি ধন্যবাদ জানান।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, এডিবি বাংলাদেশের উন্নয়নর মাইলফলক অর্জনে ধারাবাহিক ক্রমবর্ধমান সহায়তা প্রদান করে আসছে। এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা এডিবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। এই ক্রান্তিকালে এডিবির তৎক্ষণিক সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল এবং তাদের এই ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী এডিবি’র প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ারের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে ফোনে আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশকে বৃহত্তর সহযোগিতার অনুরোধ করেন। ৩০ এপ্রিল এডিবি বাংলাদেশে ১০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। নতুন করে এই ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অনুমোদনের পর এখন মোট ৬০২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ অনুমোদন করল সংস্থাটি।
এর আগে গত ২৮ মার্চ করোনা মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা (৩ লাখ মার্কিন ডলার) ঋণ অনুমোদন দেয় এডিবি। দ্বিতীয় দফায় ৩০ এপ্রিল প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা (১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ অনুমোদন দেয়।
করোনাভাইরাস মোকাবিলা ও দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে এডিবি ছাড়াও বিশ্বব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকেও ঋণ নিচ্ছে সরকার।