সদ্যঘোষিত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে অস্বীকার করে সোমবার গভীররাতে প্রয়াত এরশাদপত্মী রওশন এরশাদের বিবৃতি। শনিবার তার গুলশানের বাসায় জিএম কাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তিনি দেবর জিএম কাদেরকে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়াও করে দেন।
কিন্তু ৪৮ ঘন্টা না পেরুতেই সোমবার গভীর রাতে জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান নন বলে গণমাধ্যমে ওই বিবৃতিটি পাঠান।পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, প্রয়াত পল্লীবন্ধু এরশাদের ইচ্ছা ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান, রওশন এরশাদ বিরোধীদলের নেতা। তাদের যৌথ নেতৃত্বেই পার্টি পরিচালিত হবে।
এর বাইরে গিয়ে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য পার্টির দু’একজন নেতা চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করছেন। অথচ পার্টির তৃণমূলের কাছে তাদের নুন্যতম গ্রহণযোগ্যতাও নেই।
প্রেসিডিয়াম আরেক সদস্য প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, হঠাৎ করে এভাবে ঘোষণা না করে যদি আনুষ্ঠানিকভাবে সবাই জিএম কাদেরকে আমরা চেয়ারম্যান ঘোষণা করতে পারতাম তাহলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতোনা, আমরাও সম্মানিত হতাম।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, স্যার (এরশাদ) যে সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন তার কোনো বিকল্প নেই। জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান এ নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই এবং বিকল্পও নেই। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে ভালো হতো। অতি উৎসাহীদের জন্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জাপা যুগ্ম-মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, যখন বিএনপি থেকে নেতাকর্মীরা জাপায় আসতে শুর করেছে, ঠিক সেই সময়ে দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপির এজেন্টরা দলের বিবেদ সৃষ্টি করে পার্টির ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করছেন। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল হবে না।
রওশনের বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী বিবৃতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিনি। পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জিএম কাদেরই পার্টির চেয়ারম্যান।
সার্বিক বিষয়ে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, রওশন এরশাদ আমার মাতৃসম্যতুল্য। উনি আমার অভিভাবক। তার পরামর্শক্রমেই দল পরিচালিত হবে। রওশন এরশাদের বিবৃতিতে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি এমন বিবৃতি দিতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
দুইদিন আগেও ভাবির বাসায় গিয়েছি। আবারও যাবো। আমি আবারও বলছি আমাদের মাঝে কোনো বিবোধ নেই।
জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানেন না রওশন
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরকে অস্বীকার করে সোমবার গভীররাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে হাতে লেখা এক বিবৃতিতে রওশন এরশাদ দাবি করেছেন, যথাযথ কোনও ফোরামে আলোচনা না করেই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ওই বিবতিতে তিনি পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। রওশনের এ বিবৃতিকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সাত জন সংসদ সদস্য।
বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করে রওশন এরশাদ এরশাদ বলেন, আমি এই বিবৃতি দিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে করার কারণে বিবৃতিটি হাতে লেখা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৪ জুলাই মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
এর আগে গত জুনে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে দায়িত্বভার অর্পণ করেন তিনি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক মেনে নিলেও এরশাদের মৃত্যুর চার দিনের মাথায় গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে পরিচয় করিয়ে দেন।
আর এর পাঁচ দিন পরেই তাকে চেয়ারম্যান পদে মানতে আপত্তি জানালেন রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা।