সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মত দেশব্যাপী আবারও নতুন কোন অস্থিরতা সৃষ্টি করতে সরকার বিরোধীরা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের।
দলের একাধিক শীর্ষ নেতা বার্তাটোয়ন্টিফোর.কমকে বলেন, সরকারকে বিপাকে ফেলতে বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে বর্তমানে বড় কোন ইস্যু নেই। তাই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের মেগা প্রকল্প জড়িয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেলসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পকে ঘিরে গুজব ছড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব রটিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে ছেলেধরা গুজব যারা ছড়াচ্ছে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলেও অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, পদ্মাসেতুতে মাথা লাগবে বলে ফেসবুকে যারা গুজব ছড়িয়েছে তারা কোন সাধারণ নাগরিক নয়। এদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো বিএনপি-জামায়াত চক্র সরকারি মেগা প্রকল্পগুলো ঘিরে গুজব ছড়াতে শুরু করেছে। এই চক্রটি আবার ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে দিয়ে গণপিটুনির নামে নিরীহ মানুষকে খুন করাচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, দেশের চলমান ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং সরকারকে বিপাকে ফেলতে বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী চক্র নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ষড়যন্ত্রের নতুন জাল বিস্তার শুরু করেছে। এরা আবারও দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায়।
এই পর্যন্ত গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটির তদন্ত হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এদের ইন্ধনদাতা বা সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করা হবে বলে জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা রাষ্ট্রদোহের শামিল। তাছাড়া গণপিটুনির নামে কাউকে হত্যা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। যারা এসব গুজব ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ রক্ষা পাবে না।
সন্দেহের তালিকায় কারা আছে, এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গোয়ন্দা সংস্থার সদস্যরা তদন্ত করছেন সময়মত সব জানানো হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সোমবার (২২ জুলাই) নেত্রকোনায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশজুড়ে ছেলেধরা গুজবে মানুষকে যেভাবে পেটানো হচ্ছে তা আইনের মধ্যে পড়ে না। আপনারা জানেন যে, পদ্মা সেতুতে মাথা চাই—এমন গুজব ছড়ানো হয়েছিল। আর এ গুজবের ওপর ভিত্তি করেই এসব ঘটনা ঘটছে।
আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। তা না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে বলে সম্প্রতি ফেসবুকে গুজব রটানো হয়। এর পরই নেত্রকোনা শহরে এক যুবকের ব্যাগ তল্লাশি করে এক শিশুর মাথা পাওয়ার পর তাকে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা হয়।
এর পরই ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ছেলেধরা আতঙ্ক ও গণপিটুনি। এই গুজবে গত চারদিনে প্রাণ গেছে অন্তত পাঁচজনের এবং গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতোমধ্যেই পুলিশের সব ইউনিটকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।