তৈমুর আলম খন্দকার, আখতারুজ্জামানের মতোই পরিণতি বরণ করতে হলো এহসানুল হক মিলনকে। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং জনপ্রিয় এই নেতাকে বিএনপি’র সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। কেন পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হলো এ নিয়ে কোন ব্যাখ্যা নেই। যদি এহসানুল হক মিলন বলেছেন, তিনি খালেদা জিয়া এবং জিয়াউর রহমানের রাজনীতির আদর্শে উদ্বুদ্ধ এবং সবসময় জিয়ার সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন, যেখানে যে অবস্থায় থাকবেন দলের আদর্শের জন্য কাজ করবেন। মিলনের বিবৃতিটি তাৎপর্যপূর্ণ। মিলন তার বক্তব্যে কোথাও তারেক জিয়ার নাম উল্লেখ করেননি এবং মূলত তারেক জিয়ার সঙ্গে এহসানুল হক মিলন, মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান বা তৈমুর আলম খন্দকারের বিরোধটি সর্বজনবিদিত। গত নির্বাচনেও এহসানুল হক মিলনকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। সেখানে অর্থের বিনিময়ে তারেক জিয়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে জানা যায়। আর বিএনপিতে এখন যে শুদ্ধি অভিযান চলছে, এই শুদ্ধি অভিযান কি আত্মঘাতী না বিএনপি’র কল্যাণে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিএনপি’র একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন যে, আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। বিএনপিতে এখন যে সিদ্ধান্তগুলো সেই সিদ্ধান্ত কোনটাই দলের ভেতর নেতাকর্মীদের আলাপ-আলোচনা হয় না। এমনকি যখন এহসানুল হক মিলনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তখন তারা পাঁচ মিনিট আগেও রুহুল কবির রিজভী জানতেন না যে, এহসানুল হক মিলনকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত চিঠি তাকে লিখতে হবে। বিএনপি’র একজন নেতা বলেছেন, ওহী নাযিলের মতো করে একটি করে বার্তা আসে এবং সেটি বাস্তবায়ন করতে হয়। কেন এভাবে দল থেকে নেতাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে, পদচ্যুত করা হচ্ছে এর কোন ব্যাখ্যা নেই। বিএনপি’র নেতারাই বলছেন, যাদেরকে এখন পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদের সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং দলের বাইরে একটা অবস্থান রয়েছে। এরকম ব্যক্তিদেরকে অব্যাহতি দিলে দল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, সামনে শওকত মাহমুদ এবং মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিনের ওপর খড়গ নেমে আসতে পারে। শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত চলছে বলেও বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন যে, তিনি পেশাজীবী পরিষদ নামে সরকার পতনের আন্দোলন করছেন। সেটাকেও তারেক জিয়া ভালো চোখে নেননি। বিএনপি’র মধ্যেই এখন প্রশ্ন উঠেছে, তারেক জিয়া আসলে কি চান? কেন তিনি দলকে এরকম অস্তিত্বহীন করছেন এবং সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন? বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, আমরা যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও অর্জন করি তারপরও আমাদেরকে নির্বাচনে ভালো প্রার্থী দিতে হবে। সেখানে যারা যারা এলাকায় জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তাদেরকেই যদি বেছে বেছে বহিষ্কার করা হয় তাহলে দল টিকবে কিভাবে। বিএনপি থেকে ইতিমধ্যে খুলনার জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বাদ দেয়া হয়েছে, নারায়ণগঞ্জে জনপ্রিয় নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে কিশোরগঞ্জের জনপ্রিয় নেতা আখতারুজ্জামানকে এবং আরো অনেক জায়গায় এরকম জনপ্রিয় নেতাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাহলে একটি নির্বাচন হলে বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে?
বিগত নির্বাচনে দেখা গেছে যে, ব্যাপকভাবে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে দলের ভিতর এবং অপরিচিত, আনকোরা এবং অযোগ্য প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন তারেক জিয়া। সেরকম একটি মনোনয়ন দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করার জন্যই কি এই আয়োজন করা হচ্ছে? নাকি এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্যে রয়েছে। তবে বিএনপি’র কোন কোন নেতা বলেন যে, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে যথাযথভাবেই দেওয়া হচ্ছে। এরা দলের স্বার্থের বাইরে ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজ করে এবং এদের সাথে সরকারের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু সরকারের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ থাকুক বা দলের স্বার্থবিরোধী কাজ করুক, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই সাংগঠনিক প্রক্রিয়াটি যদি অনুসরণ না করা হয় তবে সেটি হয় অগণতান্ত্রিক। একটি অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল কখনো গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি করতে পারে না, এমনটি বলছেন বিএনপি’র কোন কোন নেতা।