জুয়াড়িদের প্রতি ইসলামের হুঁশিয়ারি

0 0
Read Time:8 Minute, 37 Second

‘ক্যাসিনো’ শব্দটি ইতালিয়ান। ক্যাসিনো বলতে বোঝায় যেখানে জুয়া, নাচ, গান ও বিভিন্ন খেলাধুলার সংমিশ্রণ থাকে। অভিধানে এর অর্থ হলো- নাচঘর; জুয়া খেলার ঘর; তাসখেলা; বা আমোদপ্রমোদের কক্ষ।

বাংলা একাডেমির ‘ইংলিশ-বাংলা ডিকশনারীতে’ এর অর্থ বলা হয়েছে, ‘জুয়া ও অন্যান্য বিনোদনমূলক ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহৃত কক্ষ বা ভবন; সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত নৃত্যশালা।’ জুয়াকে আরবিতে বলা হয় ‘আল-কিমার’ ও আল-মায়সির’। আর খিমার এবং মাইসির শব্দ দু’টি সমার্থবোধক। বাংলা ও উর্দুতে এর প্রতিশব্দ হচ্ছে জুয়া।

১৬৩৮ সালে ইতালির ভেনিসে সর্বপ্রথম জুয়ার মাধ্যমে ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু হয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে। ইসলামের সূচনালগ্নের আগেও নবী করিম (সা.) এর আগমনের সময় তৎকালীন মক্কায় নানা ধরণের জুয়ার প্রচলন ছিল। তিনি সবগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইসলামি শরিয়তে জুয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়াকে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরগুলো শয়তানের কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়েদা : ৯০-৯১)


আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (দারেমি, হাদিস নম্বর ৩৬৫৬) কিছু লোকের কাছে মনে হতে পারে জুয়া একটি লাভজনক ব্যবসা কিন্তু এর সামান্য কিছু লাভ থাকলেও ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে বহুগুণে বেশি। যেমন- সূরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতে এসেছে, ‘হে মুহাম্মাদ! তারা আপনাকে মদ এবং জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এ দুটোর মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর এতে মানুষের জন্য সামান্য কিছু উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোতে উপকারিতা অপেক্ষা ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।’

জাহেলি যুগে শুধুমাত্র ধন-সম্পদের উপরেই জুয়া হতো না, বরং কখনো কখনো স্ত্রীদেরকেও জুয়ার সওদা হিসেবে পেশ করা হত। যা ধীরে ধীরে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। লটারি, জুয়া খেলাকে আপাত:দৃষ্টিতে নির্দোষ আনন্দ মনে হলেও এর সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভাব ভয়ংকর। শুধু আমেরিকাতেই বছরে ৫৪ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় জুয়ার কারণে। প্রতিরাতে বা প্রায়শ ক্যাসিনোয় যাওয়া, গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরে আসা, বা পকেট খালি করে বা পকেট ভরে নীড়ে ফেরা লোকগুলো জুয়াসক্ত আসল জুয়াড়ি। এরা এক ধরণের মানসিক রোগীও বটে। এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন।

জুয়া যখন একজন মানুষের চিন্তা-ভাবনা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ-সবকিছু নীরবে গ্রাস করে নেয়, যখন বারবার চেষ্টা করার পরও সেই কাজ থেকে বিরত থাকা যায় না, ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক, পারিবারিক বা সামাজিক সমস্ত সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে, তখন ব্যক্তি মানসিক রোগীতে পরিণত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউ ব্যবসায়ের নামে, কেউ লোভনীয় পুরষ্কারের অফার দিয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এটাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সমাজের প্রভাবশালী লোকেরা এর পিছনে ইন্ধন জোগায়। এ ক্ষেত্রে অনেকে জানে, তারা যা করছে সেটা হারাম বা অন্যায়। আবার অনেকে জানেই না যে, লটারি বা জুয়া খেলা হারাম।

আমাদের সমাজে লটারির নামে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, অলিতেগলিতে, শহরে কিংবা গ্রামে নামে বেনামে জুয়ার রমরমা ব্যবসা চলছে। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। বর্তমানে জুয়া-বাজির জন্য বিভিন্ন রকমের আসর বসে বিভিন্ন স্থানে। কোথাও হাউজি আবার কোথাও সবুজ টেবিল নামে। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার প্রতিযোগিতায়ও বাজি ধরা হয়। প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার আরো বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। যেমন- ফ্লাস, পাশা, বাজি রেখে ঘোড় দৌড়, তাস খেলা, চাক্কি ঘোরানো ও রিং নিক্ষেপ ইত্যাদি। এগুলোর সবই কিন্তু হারাম।

আজ যদি ধর্মপ্রাণ মানুষেরা অনৈতিক এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রতিবাদ না করে মুখ বন্ধ করে বসে থাকেন, সমাজের কর্তাব্যক্তিরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর প্রতিরোধে কাজ না করেন, তাহলে প্রকাশ্যে আল্লাহর সঙ্গে বিদ্রোহের শাস্তি থেকে আমরা কেউই রক্ষা পাবো না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, তিন প্রকার লোকের জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। ১. সদা মদ পানকারী। ২. পিতা-মাতার অবাধ্য। ৩. দাইয়ুস। (মুসনাদে আহমদ : ৫৩৭২) অন্যত্র আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন।’ (বায়হাকি : ৪৫০৩; মিশকাত : ৪৩০৪)

বর্তমান ক্যাসিনো সংস্কৃতি মদ-জুয়াকে দিয়েছে দুর্ধর্ষ গতি। জুয়ার আধুনিক সংস্করণ ক্যাসিনোর মাধ্যমে গোটা জাতির অর্থ জমা হচ্ছে গুটিকয়েক জুয়াড়িদের লকারে। শত শত কোটি টাকা অচল হয়ে পড়ে আছে ওদের গুদামঘরে। এই টাকাগুলো কুক্ষিগত না হলে জাতীয় জীবনে আসতে পারতো অনেক সমৃদ্ধি। ক্যাসিনো সংস্কৃতির কবলে পড়ে আজ জাতীয় অর্থনীতি হুমকির মুখে। সরকারের বহুবিধ উন্নয়ন বন্ধ করে দিয়েছে জুয়াড়িদের এই ক্যাসিনো সংস্কৃতি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না।’ (দারেমি : ৩৬৫৩)

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলাম বিরোধী সব কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %