বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনাকে নাশকতা বলে দাবি করেছেন সীতাকুণ্ডের বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষ। সোমবার (৬ জুন) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে এমন দাবি জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ডিপোতে আট থেকে নয়শ’ কনটেইনার ছিল। কোনোটাই বিস্ফোরিত হয়নি। একটা কনটেইনারে কেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখানে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্ট।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের ডিপো থেকে কোনও কনটেইনার বের করতে কিংবা প্রবেশ করাতে কাস্টমসের অনুমতি নিতে হয়। এখানে যদি কোনও বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ থেকে থাকে তা কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানার কথা।
তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর সাধারণ শ্রমিক যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের ছয় লাখ এবং যারা আহত তাদের পরিবারকে চার লাখ টাকা করে দেওয়া হবে।
তিনি দাবি করেন, আহত অনেককেই চিকিৎসায় ওষুধপত্র দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।
এদিকে বিএম কনটেইনার ডিপোর ম্যানেজার বাবুল কুমার দেব বলেন, ডিপোতে চার হাজার ৩০০ কনটেইনার ছিল। এরমধ্যে ৯০ শতাংশ কনটেইনারে ছিল পোশাক কারখানার পণ্য। বাকি ১০ শতাংশ ছিল অন্যান্য পণ্যের কনটেইনার। এখানে আমদানি ও রফতানির কনটেইনার ছিল। আলাদা স্থানে রাখা হয় বিপজ্জনক কনটেইনার।
এর আগে, রবিবার (৫ জুন) রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেয় ডিপোর মালিকপক্ষ। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী দুর্ঘটনায় মৃত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা জানান। প্রসঙ্গত, বিএম কনটেইনার ডিপো স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
বিবৃতি তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটা কি দুর্ঘটনা, নাকি প্রতিপক্ষ কোনও নাশকতা চালিয়েছে, সেটা তদন্ত করে দেখার জন্য সরকারের সব কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে, শনিবার (৪ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডিপোতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে সাড়ে ১০টার দিকে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো ডিপো এলাকা। ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ডিপোতে আমদানি-রফতানির বিভিন্ন মালামালবাহী কনটেইনার ছিল। ডিপোর কনটেইনারে রাসায়নিক দ্রব্য ছিল, বিকট শব্দে সেগুলোতেও বিস্ফোরণ ঘটে। দ্রুত চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় হতাহত হয়েছে বেশি। আহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় রবিবার (৫ জুন) রাত পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃতদেহ পাওয়ার তথ্য জানানো হয়। তবে সোমবার (৬ জুন) প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত রাতে জানানো তথ্য সংশোধন করে ৪১ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।