বাংলাদেশের প্রায় সব নদ-নদীর তীর উপচে পড়ছে। যে কারণে গত প্রায় দুই দশকের মধ্যে এবারই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে শনিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ভারতের বরাক নদীতে নির্মিত একটি বড় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দেশটির উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসা বন্যার পানিতে সিলেটের জকিগঞ্জের অন্তত ১০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
‘এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ মানুষ বন্যায় আটকা পড়েছেন’, বলে জানিয়েছেন তিনি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে কমিশনার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বন্যায় চলতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১০ জন মারা গেছেন।
বাংলাদেশের অনেক এলাকা বন্যাপ্রবণ এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রত্যেকটি অতিরিক্ত মাত্রা বায়ুমন্ডলে পানির পরিমাণ প্রায় সাত শতাংশ বৃদ্ধি করে; যার অনিবার্য প্রভাব বৃষ্টিপাতের ওপর পড়ে।
জকিগঞ্জের ৫০ বছর বয়সী বাসচালক শামীম আহমেদ এএফপিকে বলেছেন, ‘আমার বাড়ি কোমর সমান গভীর পানিতে তলিয়েছে। পানের মতো পানি নেই, আমরা বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছি।’
‘বৃষ্টি এখন একই সাথে আমাদের জন্য আশীর্বাদ এবং অভিশাপ।’
পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় লোকজনকে মাছ ধরতে দেখা গেছে এবং কিছু কিছু বাসিন্দা গবাদি পশুকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। বিধবা লায়লা বেগমের বাড়ির সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তারপরও বন্যার পানি দুই এক দিনের মধ্যে কমে যাবে এমন আশায় দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি।
লায়লা বেগম বলেছেন, ‘আমার দুই মেয়ে এবং আমি একটি বিছানার ওপর অন্য বিছানা রেখেছি এবং এর ওপর বাস করছি। আমাদের খাবারের সংকট। আমরা দিনে একজনের খাবার তিনজন ভাগাভাগি করছি এবং মাত্র একবেলা খাচ্ছি।’
বন্যার পানি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বৃহত্তর সিলেট শহরের অনেক জায়গায় প্রবেশ করেছে। সেখানকার অন্য একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, প্রায় ৫০ হাজার পরিবার গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছে।
কমিশনার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভারতের আসাম রাজ্যের বৃষ্টি এবং সীমান্তের ওপার থেকে আসা পানির প্রবাহ— এই দুই কারণেই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, পানির স্তর নেমে গেলেই কেবল জকিগঞ্জ সীমান্তের ভাঙা বাঁধটি মেরামত করা যেতে পারে।