নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: বেরিয়ে এলো নেপথ্যের কারণ

0 0
Read Time:9 Minute, 45 Second

সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় ঘটনার সূত্রপাত। দুটি ফাস্টফুডের দোকান ওয়েলকাম ও ক্যাপিটালের কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ওয়েলকাম দোকানের কর্মচারী বাপ্পীর নেতৃত্বে ছুরি-চাপাতি নিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর চালায় কর্মচারীরা। এ ঘটনার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসে।

 

এ সময় দোকান মালিক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা কলেজ ও নিউ মার্কেট এলাকা। মঙ্গলবার দিনভর এ সংঘর্ষ চলে।

 

 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিউমার্কেটের-৪ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই ‘ওয়েলকাম’ নামের ফাস্টফুডের দোকান। সামনেই ‘ক্যাপিটাল’ নামের আরেকটি ফাস্টফুড দোকান। দুটি দোকানের মালিক সম্পর্কে চাচাতো ভাই। ইফতারের সময় নিউ মার্কেটের ভেতরে হাঁটার রাস্তায় টেবিল পেতে বসে ইফতারের ব্যবস্থা করে ফাস্টফুডের দোকানগুলো।

 

সোমবার সন্ধ্যায় এই টেবিল পাতা নিয়ে ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। বিতণ্ডার এক পর্যায়ে কাওসারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় বাপ্পী। এরপর রাত ১১টার দিকে বাপ্পী ১০-১২ জন সমর্থক নিয়ে নিউ মার্কেটে আসে। তারা ক্যাপিটাল দোকানটিতে গিয়ে কাওসারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ায়। সেখানে কাওসারের সমর্থকরা বাপ্পীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেয়। বাপ্পী সমর্থকরা মার্কেট থেকে পালিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে।

 

এ বিষয়ে নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাহেব আলী বলেন, ‘যতদূর জেনেছি, দুই ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীর মধ্যে ঝামেলায় এক পক্ষের হয়ে ঢাকা কলেজের ছেলেরা এসেছিল। এরপর এই ঝামেলা শুরু।’

 

নিউ মার্কেটে সংঘর্ষ: পরিস্থিতি থমথমে, চলছে যানবাহননিউ মার্কেটে সংঘর্ষ: পরিস্থিতি থমথমে, চলছে যানবাহন

সংঘর্ষের সূত্রপাত রাত ১২টায়

 

নিউ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী দু’জন শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেছেন এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রাত ১২টায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেটে আসে। এ সময় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ও ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

 

এক পর্যায়ে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। পরিস্থিতি তখন আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে ১২ শিক্ষার্থী আহত হন।

 

এদিকে, সংঘর্ষের কারণে নিউমার্কেট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। রাত সাড়ে ৩টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে এবং শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা চলে গেলে যান চলাচলের জন্য দুই পাশের সড়ক খুলে দেওয়া হয়।

 

এদিকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়েছে। নিউমার্কেট থানা ও ডিএমপি রমনা বিভাগের পুলিশ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক হারে টাকা পেয়ে থাকেন। তাই তারা ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

 

মানববন্ধন থেকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি

 

রাত সাড়ে তিনটায় থেকে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের সামনের মিরপুর রোডে নায়েমের গলির সামনে জড়ো হন তারা। এ সময় কিছু দোকানপাট খুললেও অধিকাংশ বন্ধ ছিল। পরে সকাল পৌনে ১১টা থেকে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হতে শুরু করে। ঢাকা কলেজের মূল ফটকের ভেতরে থাকা ছাত্রদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ঢাকা কলেজের ভবনের ছাদ থেকে নিউ মার্কেটের দিকে ইট-পাটকেল ছুটতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

 

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে যতটুকু নিরাপত্তা পাওয়ার দরকার ততটুকু পেয়েছি। আমরা প্রথমতো যেটা চেয়েছি তা হলো কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে। এবং আমরা বসে দেখবো যে সমস্যাটা কোথায়। সেই ব্যবস্থা তারা করেছে। এখন কাউকে না কাউকে তো সেক্রিফাইজ করতে হবে। সামনে যদি ঈদ না থাকতো বা রমজান না হতো, সেক্ষেত্রে আমরা দোকান বন্ধ রাখতাম। তবে সেটা তো আমরা পারি নাই।

 

এর আগে, প্রথম দফায় সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ‘কথা-কাটাকাটি’র জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আড়াই ঘণ্টা পর সংঘর্ষ থামলেও দ্বিতীয় দফায় আজ মঙ্গলবার সকাল ১০ টার কিছুসময় পরে ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। এ সময় পুলিশ কলেজের মূল ফটকের সামনে থেকে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ছে বলে দাবি করেছে শিক্ষার্থী। এতে ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি তাদের। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের ভেতরে আগুন ধরিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

 

সংঘর্ষে পথচারী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, হকারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এতে নিউমার্কেটের সব দোকানপাট বন্ধের সঙ্গে সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের একটি অংশ কলেজের ছাদে, আরেকটি অংশ চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে নিউমার্কেট ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নিউমার্কেট, রাফিন প্লাজা, বলাকা সিনেমা হল ও গাউছিয়া মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন।

 

এ অবস্থায় আগামী ৫ মে থেকে ঢাকা কলেজের আবাসিক হলগুলো বন্ধের ঘোষণা দেন ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ টি এম মইনুল হোসেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিকেলের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে এক নোটিশে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেছে শিক্ষার্থীরা।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *