ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এক শিশুর মরদেহ দাফনে বাধা দিয়ে ‘চাঁদা’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
চাতলপাড় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) কাঞ্চন কুমার সিংহের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে ভলাকুট ইউনিয়নের কান্দি গ্রামেও এমন আরো একটি অভিযোগ রয়েছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ভলাকুট ইউনিয়নের দুর্গাপুরে দুপুরে আরিফা আক্তার নামে ১৫ মাস বয়সী এক শিশু বাড়ির পাশে ডোবার পানিতে ডুবে মারা যায়।
খবর পেয়ে চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির তদন্তকারী কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার সিংহ দাফনের আগ মুহূর্তে দুর্গাপুর গ্রামে নিহতের বাড়িতে পৌঁছে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দাফন করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। পরে পুলিশের দাবিকৃত চাঁদা দেওয়ার পর লাশ দাফনের অনুমতি দেন।
নিহত আরিফার চাচা মো. বোরহান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বাজার থেকে কাফনের কাপড় নিয়ে এসে দেখি বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ। তারা লাশের ময়নাতদন্ত করতে বলেন। তখন আমরা আমাদের সন্তান পানিতে ডুবে মারা গেছে। আমাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই বলে জানাই।
পরে কাঞ্চন কুমার সিংহের কাছে জানতে চাই তাহলে কেন লাশের ময়নাতদন্ত করতে হবে? এর উত্তরে তিনি বলেন, লাশের ময়নাতদন্ত করতে ২০ হাজার টাকা লাগে। আমাদের ১৫ হাজার টাকা দিয়ে দাও তাহলে আর কোনো সমস্যা হবে না। সাবেক ইউপি সদস্য শাফি মাহমুদ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিততে কাঞ্চন কুমার সিংহের হাতে ৮ হাজার টাকা তুলে দিই।
শাফি মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি জানার পর কাঞ্চন কুমার সিংহকে ফোন করে বলি, পরিবারটি খুবই গরিব। আপনারা তো বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক টাকা কামান। এদের টাকাটা ফেরত দিয়ে দেন। তখন ওই কর্মকর্তা টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তা ছাড়াও উক্ত ইউনিয়নের কান্দি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ও নিহতের মামা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, তার বোনজামাই গ্রামের মাসুক মিয়ার ছেলে মো. কালু মিয়া (৪) গত শবে বরাতের দিন বাড়ির পাশে নদীর পানিতে ডুবে মারা যায়।
খবর পেয়ে আইসি কাঞ্চন কুমার সিংহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। নিহতের পরিবারের কারো কোনো অভিযোগ না থাকলেও তিনি লাশ দাফনে বাধা দেন। পরে গ্রামের চৌকিদার ধন মিয়াকে দিয়ে এক রাত একদিন লাশ পাহারার ব্যবস্থা করেন। এ জন্য চৌকিদার ধন মিয়াকে দিতে হয় এক হাজার টাকা ও আইসি কাঞ্চন কুমারকে দিতে হয় ৩২ হাজার টাকা। কাঞ্চন কুমার সিংহ ৩২ হাজার টাকা পাবার পর লাশ দাফনের অনুমতি দেন।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা আইসি কাঞ্চন কুমার সিংহের দাবি, লাশের সুরতহাল রিপোর্টের কাগজ নাসিরনগর সদরে পাঠাতে নৌকা ভাড়া বাবদ এক হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। ৮ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।
সরাইল, নাসিরনগর, আশুগঞ্জের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, মো. আনিসুর রহমান বলেন, যদি টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এটি পুলিশের জন্য লজ্জাজনক। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।