প্রথম রোজা, তাই মহানগর প্রজেক্টর বাসিন্দা মাহফুজা আক্তারের রান্না ঘরে আজ ছিল নানা স্পেশাল আইটেমর ইফতার আয়োজন। দুপুর থেকে জোগাড় যন্ত্র করে রেখেছেন। বিকাল ৩টা বাজতেই হেঁসেলে রান্না চড়ালেন। কিন্তু একি! চুলা জ্বলছে পিটপিট করে। কড়াই গরম হতেই হাওয়া আগুন।
দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও গ্যাস আসার নাম নেই। এদিকে ইফতারির সময় ঘনিয়ে আসছে। বাধ্য হয়ে ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাইরে ইফতারি কিনতে গেলেন তার ছেলে। কিন্তু বাইরের ইফতারির দোকানগুলোতে এত ভিড় যে ২০ টাকার নিমকি কিনে ঘরে ফেরেন। প্রথম রোজার ইফতারিটা ফলমূল দিয়েই সারতে হলো!
তীব্র গ্যাস সংকটে পবিত্র রমজানের প্রথম দিন এমন অভিজ্ঞতায় কেটেছে রাজধানী বাসীর। ইফতারির সব আয়োজন করেও গ্যাস কারণে ঘরের তৈরি ইফতার করতে পারেন নি তারা। এমনকি রাত ১০টা বাজলেও কোন কোন এলাকায় গ্যাস আসার কোন খবর নেই। সেহরীর রান্না নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী।
শেভরন সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৩ এপ্রিল) মৌলভীবাজারের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাসের সঙ্গে বালু উঠে আসে। কোন কূপ থেকে উঠছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। তাই জরুরি ভিত্তিতে ছয়টি কূপের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। এর ফলে দুপুরের দিকে হঠাৎ গ্যাসের সরবরাহে বড় ধরনের সংকট দেখা দেয়।
গ্যাস সরবারহ বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গেছে। গ্যাস বিতরণ কেন্দ্রে ফোন করে ভোক্তারা অভিযোগ করেন। কেউ কেউ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য বার বার ফোন করে অনুরোধ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রাজধানীবাসীকে গ্যাস সংকট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
মিরপুরের বাসিন্দা নাছরিন আক্তার রাত ৯টা ৩৭ মিনিটে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, রোজার সময় রাতের বাজে সাড়ে নয়টা, এখনো গ্যাস নাই, আল্লাহ্ তোদেরকে হেদায়েত দান করুন। আমিন।
ধানমন্ডী এলাকার বাসিন্দা আপন তারিক ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সকাল থেকেই গ্যাসের চুলায় আগুন নেই, প্রথম রোজায় কঠিন এক অভিজ্ঞতা! ইফতার বাইরে থেকে কেনা হয়েছে, সেহরির খাবারও কিনতে যাচ্ছি হোটেল থেকে! যদিও শুনছি- আশপাশের হোটেলেও খাবার সংকট শুরু হয়েছে! সংযমে আছি, কাউকে গালি দিতেও পারছি না! সামনে উনারা আরও কী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা দেন-সেটাই ভাবছি।
আজিমপুরের বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান মিলন লিখেছেন, পহেলা রোজায় সারাদিন আজিমপুর, নবাবগঞ্জ, চক বাজার, লালবাগ, ইসলাম বাগ, কামরাঙ্গির চড় সহ পুরান ঢাকা জুড়ে গ্যাসের তীব্র সংকট। আজ পহেলা রমজান ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রায় অনেকে এবং তাদের ছোট ছোট সন্তানেরাও প্রথম রোজা রেখেছে। প্রথম রোজায় সবাই এক সাথে ইফতারি করা উপলক্ষে বাসার মহিলাদের ছিলো ইফতারির বাড়তি আয়োজন। কিন্তু সব কিছু ব্যর্থ করে দিলো তীব্র গ্যাস সংকট। আজ বেশির ভাগ বাসায় ইফতারি না তৈরি করতে পারায় ইফতারির দোকান গুলোতে ছিলো সারা দিন উপোস রোজাদারদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকের ভাগ্যে ইফতারিও জোটেনি।
এদিকে প্রথম রোজার দিনে গ্যাস সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে হয়েছে, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য এমনটা ঘটেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপের সৃষ্টি হতে পারে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আশা করা যাচ্ছে।
গ্রাহকদের ‘সাময়িক অসুবিধার’ জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।