বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হল সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিসিসি

0 0
Read Time:6 Minute, 38 Second

৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৭১’র মহান স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষী বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হল সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিসিসি।


বিসিসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, প্রায় শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঘেরা বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হল সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করে যাচ্ছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)। প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর প্রাণকন্দ্র বীরশ্রেষ্ট শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির সড়কস্থ (সদর রোড) অশ্বিনী কুমার টাউন হল আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সংস্কার ও সৌন্দর্যের কাজ করছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) তার নিজস্ব উৎস ও সরকারী অনুদানের  (থোক ও বিশেষ থোক) মাধ্যমে এ উন্নয়ন মূলক কাজ করছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ঐতিহ্যেবাহী অশ্বিনী কুমার টাউন হলটিকে সম্পূর্ণ নতুন রূপে নগরীর বাসিন্দাদের উপহার দিবে বিসিসি। টাউন হলটির মধ্যে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে আধুনিক শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করা হবে। এছাড়াও হলের অভ্যান্তরে অডিটোরিয়ামটিকে অত্যাধুনিক লেজার লাইট ও বিদেশী ফোকাস লাইট দিয়ে সাজানো হবে।


এব্যাপারে বরিশালের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সৈয়দ দুলাল জানান, অশ্বিনী কুমার টাউন হল বরিশালবাসীর কাছে একটি হৃদয় স্থম্ভ। বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম কলেজ) কলেজের রাজনীতিরও চেতনার কেন্দ্র ছিলো এ টাউন হলটি। যা গত প্রায় ১’শ বছর ধরে একই রকম অবস্থায় রয়েছে। বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হলেও ভবনের মূল ভিত্তি ঠিক রাখা হয়েছে। টাউন হলের সংস্কার কাজটি নি:সন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।


এ বিষয়ে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াত বরিশাল প্রেসক্লাব’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ জানান, অশ্বিনী কুমার হলটি হচ্ছে, জাগ্রত বরিশালবাসীর চেতনার প্রতীক। বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা এই হলটি ব্রিটিশ আমল থেকে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। 


এবিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)-এর প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা  সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ বলেন, অচিরেই ঐতিহ্যের স্বরূপ ফিরে পাচ্ছে বরিশালের শতবর্ষীয় বিপ্লব-বিক্ষোভের ঐতিহাসিক অশ্বিনী কুমার টাউন হল। তাছাড়া, টাউন হলের পাশাপাশি নগরীর প্রতি উন্নয়ন মূলক কাজ মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করছেন।


এ প্রসঙ্গে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সদ্য স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ইতিহাসবিদ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি বাসস’কে বলেন, ১৯০৬ সনের ১৪ এপ্রিল বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে এ রাজা বাহাদুরের হাবেলীর স্থানেই সমগ্র ভারতবর্ষে ব্রিটিশ পুলিশ সর্বপ্রথম মিছিলে হামলা করে রক্তপাত ঘটিয়ে ছিল। তৎকালীন ‘বন্দেমাতারম্’ ধ্বনি ছিল এর মূলশক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনকারী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ প্রতিবাদের স্মারক হিসেবে “অশ্বিনী কুমার হলটি’ ট্রাষ্টি সম্পত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বরিশালবাসীর সভা সমাবেশ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য উৎসর্গ হিসেবে। বরিশাল সিটি করর্পরেশন এটির পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ১৯৬০ সালে সামরিক ফরমান বলে তৎকালিন মিউনিসিপালিটির উত্তারাধিকার সূত্রে। 


তিনি বলেন, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চার মূল কেন্দ্র “অশ্বিনী কুমার হল। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডে এটি অবস্থিত। শুরু থেকেই এখানে বিভিন্ন ধরনের সভা, সেমিনার, নাটক, মেলা ও মৌসুমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বলে বরিশালবাসীদের নিকট এটি ‘টাউন হল’ নামেই বেশি পরিচিত। বরিশালের উন্নয়নের জন্য যিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন, ইতিহাসের সে অবিসংবাদিত নেতা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মরণে হলটির নামকরণ করা হয়েছে।


ইতিহাসবিদ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ১৯২০ সালে অশ্বিনী কুমারকে সভাপতি ও শরৎচন্দ্র গুহকে সম্পাদক করে হল নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং ওই বছরেরই ১৫ অক্টোবর রাজা বাহাদুরের হাবেলির মালিকদের নিকট থেকে জমি ক্রয় করা হয়। পরের বছর আগস্ট মাসে হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৩০ সালে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *