বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের দ্রুত সাজা দিতে সরকার পৃথক সেল গঠন করেছে। বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নির্বাচনের আগে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে শাস্তি দিতে চায়, যাতে তারা নির্বাচন করতে না পারে। ’
শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে লিফলেট বিতরণকালে পুলিশ একটি নাশকতার মামলায় ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেনের ছেলে বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ইশরাক দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ করছিলেন, তাকে বিনা উসকানিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হয় সেখানেও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, টিয়ারগ্যাস সেল নিক্ষেপ করা হয়, নির্যাতন করা হয়। ’
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে মুগাদা থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এখানে ৩২ জন খালাস পেয়েছেন আর সাতজনকে দুই বছর তিন মাস/দুই বছর এক মাস এভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। এটা এখন সারা দেশেই চলছে। আমরা শুনেছি যে, সরকার একটি তালিকা তৈরি করেছে যেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করা হয়েছে এবং অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আগের মূর্তি ধারণ করেছে। ২০১৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যেমন বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে মাঠশূণ্য করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
এবারও ২০২৩ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একই কাজ করছে। ’
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। এর প্রমাণ হচ্ছে মুগদা থানার মামলা। যেখানে কোনো কিছু নাই, নাথিং। আমার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সেই মামলাগুলোতে কী আছে? একটা হচ্ছে আমি ময়লার গাড়ি পোড়াচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে সেক্রেটারিয়েটের ভেতরে মোটরসাইকেলের পেছনে গিয়ে বোমা মেরেছি। ’
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নতুন ইসি নাটক করেই যাচ্ছে। তারা বুদ্বিজীবী, সাংবাদিকদের ডাকছে। তাদের ডেকে খুব সুন্দর কথা বলছেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সুন্দর বাংলা বলেন। কথা বলার ভঙ্গিও সুন্দর। আগের ভদ্রলোক তো ছিলেন যে কথাই ভিন্নভাবে বলতেন। এখনকার জন চমৎকার কথা বলেন এবং মানুষকে বিমোহিত করার চেষ্টাও করেন। ’
তিনি বলেন, ‘ইসি যে নাটকগুলো করছে তা সবচাইতে ভয়াবহ। এই নাটকগুলো করে তারা আবার নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। যে নির্বাচন তারা আগের মতোই জোর করে এবং ভিন্ন কৌশলে। এবার হয়তো আগের মতো নির্বাচন হবে না। কোন ধরনের নির্বাচন হবে ? গতবার তো আগের রাতেই নির্বাচন হয়ে ছিল। এখন ৭ দিন আগেই হয়ে যাবে কিনা জানি না। ইট ইজ গোয়িং টু হেপেন।
গণমাধ্যমকর্মী আইন নিরাপদ নয়-তিনি বলেন, ‘সত্য লেখার কারণে সাংবাদিকদের জেলে যেতে হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের পর এখন গণমাধ্যম কর্মী আইন করতে যাচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী বলছেন এটা রিভিউ করা হবে। রিভিউ করে কী করবেন সেটা তো আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ক্ষেত্রে দেখেছি। ’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, এসকে সেকান্দার, হারুনুর রশীদ, মুনির হোসেন চেয়ারম্যান, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান ফয়েজ।