মান রক্ষায় চা চাষিদের আড়াই থেকে তিন পাতা প্লাকিং করার নির্দেশ

0 0
Read Time:5 Minute, 14 Second

পঞ্চগড় সহ উত্তরের সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র চা চাষিরা কাঁচা চা পাতা সরবরাহে বিপাকে পড়েছেন। শুরু থেকে তারা কাঁচি দিয়ে চা গাছ থেকে ৬ থেকে ৭ পাতা কারখানাগুলোতে সরবরাহ করে আসছেন। এতে তৈরী চা পাতার গুণগত মান কমে গেছে। চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছেন নিম্মমানের এই চা পাতা অকশন মার্কেটে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে না।

 

ফলে চাষিরাও চা পাতার দাম পাচ্ছে না। তাই চাষিদেরকে কারখানায় চা গাছের আড়াই থেকে তিন পাতা সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছেন চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি। এমন নির্দেশনায় অনেক চাষি তিন পাতা সরবরাহ শুরু করলেও অনেকে পড়েছেন বিপাকে।

চা বোর্ড এবং কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন সচেতনতা ও বিজ্ঞান ভিত্তিক চা চাষের অভিজ্ঞতা না থাকায় চা চাষিরা কাঁচি দা দিয়ে কেটে চা গাছের ৬ থেকে ৭ পাতা সরবরাহ করেন।

অথচ চায়ের গুণগত মান এবং রাসায়নিক দ্রব্যগুলো ঠিক রাখার জন্য হাত অথবা মেশিন দিয়ে চাপাতা প্লাকিং করা প্রয়োজন। দেশের অন্যান্য জেলায় হাত ও মেশিন দিয়ে ৩/৪ পাতা প্লাকিং করা হলেও পঞ্চগড়ে ৬/৭ পাতা প্লাকিং করার প্রবনতা তৈরী হয়েছে। তাই চায়ের অকশন বাজারে পঞ্চগড়ের চায়ের দাম কমে গেছে।

বিসমিল্লাহ টি ফ্যাকটরির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মিঞা জানান, চাষিরা ডাল সহ ৭/৮ পাতার চা পাতা নিয়ে আসে।

 

এতে কারখানায় জ্যাম হয়ে যায়। চা পাতার মান নষ্ট হয়। অকশন মার্কেটে সিলেটের চা বিক্রি হয় ২ থেকে ৩’শ টাকা কেজি। মান খারাপ হওয়ার কারণে পঞ্চগড়ের চা বিক্রি হয় ১শ ২০ থেকে ১’শ ৪০ টাকা। এ ব্যাপারে সব কারখানাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আমরা আমাদের কারখানার পক্ষ থেকে চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ করা শুরু করেছি। এখন অনেক চাষি ৩ থেকে ৪ পাতার কাঁচা চা পাতা দিচ্ছেন। তাদেরকে আমরা নির্ধারিত দাম দিচ্ছি।

চা বিশেষজ্ঞ মাসুদুর রহমান জানান, পঞ্চগড়ের চাষিরা বিজ্ঞান সম্মতভাবে চা পাতা উৎপাদনের জন্য এখনো প্রশিক্ষিত হয়ে ওঠেনি। ৭০ শতাংশ ভালো পাতা হলেও চায়ের মান ঠিক থাকে। ভালোমানের চা তৈরীর জন্য চাষিরা যদি একটি পাতা একটি কুড়ি ৫ শতাংশ, দুটি পাতা এক টি কুড়ি ৫৫ শতাংশ, তিনটি পাতা একটি কুড়ি ১৫ শতাংশ, নরম ভাঞ্জি ১৫ শতাংশ,শক্ত ভাঞ্জি ৫ শতাংশ, শক্ত পাতা ১০ শতাংশ সরবারহ করেন তাহলে চায়ের মান ঠিক থাকবে।

 

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, চায়ের গুণগত মান ঠিক রেখে চা পাতা কাটার জন্য খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে আমরা চা চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমরা সকল চাষিকে আড়াই থেকে ৩ পাতা কাঁচা চা পাতা সরবরাহ করতে বলি। কিন্তু অনেক চাষি তা মানেন না । ৬ থেকে ৭ পাতা কাঁচা চা পাতা থেকে ভালো মানের চা পাতা তৈরী সম্ভব নয়। কারখানা কর্তৃপক্ষেরও এসব চা নেয়া ঠিক নয়। সেই সাথে চাষিদেকে সচেতন করার দায়িত্ব কারখানাগুলোরও রয়েছে। তারা এ ব্যাপারে আরও জোড়ালো উদ্যোগ নিতে পারে।

 

চায়ের মুল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি এবং পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম বলেন, অনেক চা-চাষি নির্ধারিত মানের (সাড়ে তিন থেকে চার পাতা) বাইরে পাতা দিচ্ছেন। যারা ভালো মানের পাতা দিচ্ছেন তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। আমরা বেশ কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন করেছি। আশা করি নির্ধারিত মূল্যের কম দামে পাতা কেনার অভিযোগ আর থাকবে না।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *