মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী

0 0
Read Time:7 Minute, 25 Second

ঢাকার আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ম্যাগনাম আলোকচিত্রশিল্পী মার্ক রিবুর একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ : শোক ও সকাল’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হবে আজ বিকাল ৪টায়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা এর আয়োজন করছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রধান অতিথি ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যঁ মারা সু অতিথি থাকবেন।

‘লা’সেসিও লেসামি দ্য মাখ রিব্যো’ ও গিমে মিউজিয়ামের সহযোগিতায় আয়োজিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তোলা আলোকচিত্রের এ প্রদর্শনী। এতে থাকছে পূর্বে অপ্রকাশিত একগুচ্ছ আলোকচিত্র। প্রদর্শনীতে পঞ্চাশটি আলোকচিত্র প্রদর্শিত হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এ প্রদর্শনীর আয়োজন।

প্রথম প্রজন্মের ম্যাগনাম আলোকচিত্রীদের অন্যতম, ফরাসি বিদগ্ধ আলোকচিত্রশিল্পী মার্ক রিবুর জন্ম লিঁও’র কাছাকাছি, সাঁ-জেনি-লাভাল এ, ১৯২৩ সালে। তিনি তার প্রথম ছবিগুলো তুলেছিলেন প্যারিসে, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘এক্সপোজিসিও ইউনিভেখসেল’-এ, ১৯৩৭ সালে, তার ১৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাবার দেওয়া উপহার ছোট্ট ভেস্ট পকেট কোডাক ক্যামেরা দিয়ে। ১৯৪৪-এ তিনি হানাদার নাজি বাহিনির বিরুদ্ধে ভেখকোর প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি লিঁও’র ইকোল সনথ্রালে প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেন ও এরপর কাজ শুরু করেন। যদিও তিন বছর পরই পেশা পরিবর্তন করে তিনি একজন আলোকচিত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৫৩ সালে তার তোলা আইফেল টাওয়ারের ওপর কাজে ব্যস্ত একজন রংমিস্ত্রির ছবি লাইফ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এটাই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত আলোকচিত্র। এরপর, অঁরি কাখতিয়ের-ব্রেসন ও রবার্ট কাপা’র আমন্ত্রণে তিনি ম্যাগনাম ফটোতে যোগ দেন।

১৯৫৫ সালে তিনি সড়কপথে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফগানিস্তান হয়ে ভারতে পরিভ্রমণ করেন, সেখানে তিনি বছরাধিককাল অবস্থান করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি কলকাতা থেকে প্রথমবারের মতো যান বেইজিং, যেখানে পরেও আরও বহুবার তিনি অবস্থান করেছেন। জাপানে তিনি খুঁজে পান সেই অনুপ্রেরণা, দূরপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণের পর যা তার প্রথম প্রকাশিত বই, জাপানের নারীরা, লিখতে উৎসাহিত করেছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়নে তিন মাসকালীন প্রবাসজীবন শেষে, ১৯৬০ সালে তিনি আলজেরিয়া ও সাব-সাহারা আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ছবি তোলেন। ১৯৬৮ ও ১৯৭৬ এর মধ্যবর্তী সময়ে, তিনিই ছিলেন সেই স্বল্প কয়েকজন ব্যক্তির অন্যতম, যারা যুগপৎ উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে ছবি তোলার অনুমতি পেয়েছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে পেন্টাগনের সামনে আন্দোলন চলাকালীন তার তোলা ‘ফুল হাতে একজন তরুণী’র ছবি শান্তির আন্তর্জাতিক প্রতীকে পরিণত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ও তিনি ১৯৭১ সালের নভেম্বরের শেষদিকে কলকাতায় আসেন। তিনি শরণার্থী শিবির ও মুক্তাঞ্চলে ঘুরে দেখেন। ৩ ডিসেম্বরে যখন ভারত-পাকিস্তান সর্বতোভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থিত অগ্রসরমান ভারতীয় সেনাবাহিনির সঙ্গে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তার অভিযাত্রা শুরু হয় জামালপুর-শেরপুর থেকে, তারপর প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে, তিনি প্রত্যক্ষ করেন জামালপুরের বিজয়সূচক যুদ্ধ, যা তিনি বিস্তৃতভাবে ক্যামেরাবন্দী করেন। তিনি ছিলেন প্রথম সাংবাদিকদের অন্যতম, যারা ঢাকায় প্রবেশ করে এ নগরীর মুক্তিকে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। এসব ছবির অধিকাংশই আজ পর্যন্ত অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে, তিনি প্রায়ই ফিরে যেতেন প্রাচ্যে ও দূরপ্রাচ্যে, বিশেষ করে অ্যাংকর ও হুয়াং-শানে; কিন্তু তিনি চীনের দ্রুত ও গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরগুলোও অবলোকন করেছেন, এমন একটি জাতি যাকে তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রত্যক্ষ করেছেন। ২০১১ সালে মার্ক রিবু ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৭ সালের ভেতর তার ধারণ করা ১৯২টি আলোকচিত্রের মূল প্রিন্ট প্যারিসের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট (সেন্টার জর্জ পম্পেদু)-কে দান করেন। তার আলোকচিত্র অনেক মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা অর্জন করেছে ও অন্যান্য অনেক জায়গার মতোই প্যারিস, নিউইয়র্ক, সাংহাই ও টোকিওর জাদুঘর ও গ্যালারিগুলোতে প্রদর্শিত হয়েছে। মার্ক রিবু ২০১৬ সালে প্যারিসে ৯৩ বছর বয়সে মারা যান। প্রদর্শনীটি যৌথভাবে কিউরেটিং করেছেন মফিদুল হক ও লরেন ড্রুরে।

প্রদর্শনীটি দ্বিতীয়বারের মতো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে জানুয়ারি মাসে প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শনীটি চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *