যেসব ভেষজ খাবারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

0 0
Read Time:11 Minute, 57 Second

প্রাকৃতিক ভেষজ খাবার আছে যা ভাইরাস সংক্রমণকে রুখবে, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ শক্তি। সুস্থ শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান হল ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেলস, ফাইবার। যেসব খাবারে এই সব গুণ আছে তাকেই বলে ইমিউন সিস্টেম বুস্টারস।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে শরীর দুর্বল হলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নড়বড়ে হলে, তার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। তাই এই সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বাড়ানো দরকার। প্রাকৃতিক ভেষজ খাবার খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যা অবশ্যই রাখতে হবে প্রতিদিনের ডায়েটে।

হলুদ-দুধ

হলুদের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যাদের ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আছে তাদের জন্য হলুদ-দুধ বিস্ময়করভাবে উপকারী হতে পারে। সাধারণভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সেরা ঘরোয়া ওষুধ হলুদ-দুধ। প্রতিদিন সকালে বা রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হলুদ-দুধ পান করলে সর্দি ও ফ্লু দূরে থাকে।

হাঁচি-কাশি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। হলুদে উপস্থিত অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ একদিকে যেমন নানাবিধ ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়, তেমনি এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজ রেসপিরেটারি ট্রাক্ট ইনফেকশন এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হলুদ-দুধ রক্তকে বিষ মুক্ত করে দেয়। শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে হলুদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির মধ্যে থাকা কার্কিউমিন, রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে ব্লাড ভেসেলের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তো কমেই, সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগভোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

নিমেষে মাথা যন্ত্রণা কমিয়ে দেয়। এবার থেকে সাইনুসাইটিসজনিত মাথার যন্ত্রণা হলেই এক কাপ হলুদ মেশানো দুধ খেয়ে নেবেন। দেখবেন কষ্ট কমতে একেবারে সময়ই লাগবে না। কারণ হলুদের ভেতরে থাকা কার্কিউমিন এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের ভেতরে প্রদাহ কমায়। ফলে মাথা যন্ত্রণা কমতে সময় লাগে না।

হলুদ-দুধ জয়েন্ট এবং পেশির ব্যাথাও ভালো করে দেয়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় হালকা জয়েন্ট পেইন এবং মাংসপেশিতে ব্যথা একটি সচরাচর ঘটনা। হলুদে থাকা প্রদাহরোধী উপাদান এই ব্যথা ভালো করতে পারে।

উষ্ণ পানিতে লেবুর রস

সকালে গরম পানিতে লেবুর রস খেলে অনেক উপকার। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যস্ততার কারণে নাস্তা সময়মতো খাওয়া হয়ে ওঠে না। তবে একটি খাবার রয়েছে সকালে উঠে খেলে আপনার সারাদিনের হজমশক্তি বাড়ানো ছাড়াও অনেক উপকার পাবেন।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুতে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, যা দেহের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। লেবুর শরবত লিভারে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান বের করে। ফলে লিভারের যেকোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস খেলে দেহের ভেতরে পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

লেবু ত্বক ভালো রাখে, শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ করে এবং কিডনির পাথরও প্রতিরোধ করে।

লেবু ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। লেবু ব্যবহারে চেহারায় বয়সের ছাপ কমবে।

প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সারা দিনের হজমশক্তি ভালো থাকে।

লেবুতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ দেহের হরমোনকে সক্রিয় রাখে ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

বেদানা-লেবু-কমলার রস

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেতে হবে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল। বেদানা-লেবু-কমলার তিনটি ফলের রস একসঙ্গে নিংড়ে পানীয় বানিয়ে রোজ একগ্লাস করে খেতে পারলে আপনার শরীরে ভিটামিন আর অ্যান্টি অক্সিডেন্টের অভাব হবে না। শরীরকে জীবাণুমুক্ত রাখে এই ভিটামিন।

রোজ একটি করে ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এখন যারা করোনা, ফ্লু-এর জেরে জেরবার তাদের জন্য রইল তিনটি ফলের হদিশ। বেদানা, কমলা আর মুসাম্বি লেবু। এই তিনটি ফলের রস একসঙ্গে নিংড়ে পানীয় বানিয়ে রোজ একগ্লাস করে খেতে পারলে আপনার শরীরে ভিটামিন আর অ্যান্টি অক্সিডেন্টের অভাব হবে না। উপরন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তাই আপাতত তেল-ঝাল-মশলা এড়িয়ে পেট ভরান বাড়িতে বানানো এই ধরনের পুষ্টিকর টক-মিষ্টি গোলাপি সরবত বা পিঙ্ক লেমোনেড দিয়ে।

এই সরবতে রয়েছে এমন তিনটি ফল যা শরীরকে চাঙা করে নিমেষে। হজমশক্তি বাড়ায় ঝটপট। ডালিম বা বেদানা, কমলা এবং মুসাম্বি লেবুর রস দিয়ে বানানো এই পানীয় পানে রোগে ভোগা শরীরও তন্দরুস্ত। পাশাপাশি রক্ষা করে সংক্রমণ, সর্দি, কাশি এবং ফ্লুর ঝুঁকি। কারণ, তিনটি ফলেই আছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, থিয়ামিন, ফোলেট ও পটাসিয়াম থাকে। লেবু জাতীয় ফলে ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে থাকে যা শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

পেঁয়াজের রস

পেঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টি-বায়োটিক, অ্যান্টি-সেপ্টিক, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান। রয়েছে খাদ্য আঁশ, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি ও সি। অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লোহা, ফোটা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস কোরাসিটিন এবং সালফারও রয়েছে পেঁয়াজে। পেঁয়াজের রস কাশি নিরাময় করে, এটি অনেকেরই অজানা। পেঁয়াজ রস করে তাতে মধু দিয়ে খেতে পারেন।

তাই প্রতিদিন ১০০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত পেঁয়াজ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাই রোগের ভাইরাসের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে এটি। জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, গলা ব্যথা, এলার্জি ইত্যাদি খুব দ্রুত পেঁয়াজের দ্বারা দূর করা সম্ভব। পেঁয়াজের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিকভাবেই রোগ নিরাময় হয়।

গরম পানিতে মধু, রসুন ও আদা

মধু, রসুন ও আদা এই তিন ঘরোয়া উপাদানে অনেক রোগ ভালো হয়। বিশেষ করে ঠাণ্ড-কাশি ও গলাব্যথা, এই তিন উপাদান খুব ভালো কাজ করে। তবে মধু, রসুন ও আদা হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এই পানীয় শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণও বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে এই মিশ্রণটি মানব স্বাস্থ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

গরম পানির সঙ্গে মধু, রসুন ও আদার মিশ্রণ, ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য উপকারী।

আদা সাধারণত সর্দি, ফ্লু এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় সহায়তা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদা শ্বাসজনিত রোগের লক্ষণগুলো কমাতে সহায়তা করে। রসুন ও মধুতেও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। তাই এগুলোও শ্বাসজনিত রোগের লক্ষণগুলো হ্রাস করতে সহায়তা করে।

রসুন একটি শক্তিশালী মসলা, যা ব্যাটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

মধু, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলোর অধিকারী হিসেবে পরিচিত, যা সংক্রমণ রোধ করে।

আদাতে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে, যা ঠাণ্ডা, ফ্লু ও গলাব্যথা প্রতিরোধ করে। আর রসুন ও মধুর অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্যের কারণে সাধারণত ঠাণ্ডা লাগা থেকে মুক্তি দেয়।

মধু, রসুন ও আদার সংমিশ্রণ পেটের বদহজম, অম্বল, পেটেব্যথা, ফোলাভাব এবং গ্যাসসহ সব হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

হার্ট ভালো রেখে আদা রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, রসুন ও মধু উভয়ই উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে।

মধু, রসুন ও আদা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %