ঢাকায় রাইড শেয়ারিং সেবায় কেবল ঢাকা মেট্রো হিসেবে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলগুলোই চলতে পারবে। ঢাকার বাইরের লাইসেন্সধারীরা আর এ সুযোগ পাবে না। এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ূনঃ শহরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে “রিকশা”
অনলাইন ডেস্কঃ সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে মোটরসাইকেলের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে। এর পেছনে গ্রাম থেকে আসা মোটরসাইকেলকেই দায়ী মনে করছে পুলিশ। তারা বলছে, উবার-পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে আয়ের আশায় বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল ঢুকছে ঢাকায়।
তাই ঢাকায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকার বাইরের কোনো জেলায় নিবন্ধিত মোটরসাইকেল রাজধানীতে উবার-পাঠাওসহ অন্যান্য রাইড শেয়ারিং অ্যাপে চলতে পারবে না।
রাইড শেয়ারিং সেবা দিতে চাইলে কেবল ‘ঢাকা মেট্রো’ হিসেবে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলই ব্যবহার করতে হবে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে যানবাহনের অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে আলোচনা করবে তারা। এই প্রস্তাবটিকে অনুমোদন দিলে এক ধাক্কাতেই ঢাকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমে যাবে বলে আশা করছে পুলিশ।
এদিকে, এ প্রস্তাব নিয়ে পুলিশ এক ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছলেও বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিআরটিএ’র সঙ্গে আলোচনা করতে হবে বলে মনে করছে পুলিশ। কারণ মোটরসাইকেলসহ যানবাহনের অনুমোদন আসে তাদের কাছ থেকেই।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মেট্রো ছাড়া বাকি সব মোটরসাইকেল ঢাকায় নিষিদ্ধের প্রস্তাব তারা করেছেন। তবে এর সঙ্গে বিআরটিএ যুক্ত রয়েছে। তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
পুলিশ বলছে, উবার-পাঠাওসহ রাইড শেয়ারিং অ্যাপের কারণে এমনিতেই মোটরসাইকেল চলাচল বেড়ে গেছে। এসব মোটরসাইকেলের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা ফুটপাত দিয়ে চলাচল। তাছাড়া যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আইন না মানার ক্ষেত্রেও মোটরসাইকেল এগিয়ে।
মোটরসাইকেল বাজারজাতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশে সাড়ে ৪ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিক্রি হয়েছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার। প্রতিবছর মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ছে। আর বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ পর্যন্ত ঢাকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯০টি। এখন ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৪৭টি করে নতুন মোটরসাইকেল নামছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানান, দেশে ৩৫ লাখ গাড়ির মধ্যে এখন ২২ লাখই মোটরসাইকেল। আর ঢাকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখের বেশি।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট এআরআইয়ের হিসাবে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানীতে ৪৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নিহত ও ১৯ জন আহত হন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে এ সংখ্যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। এসব দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অনেককেই স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে রিভাইস স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (আরএসটিপি) অনুযায়ী, মোটরসাইকেল ঢাকার জন্য সমাধান নয়, এটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলা হয়েছে। এমনকি মোটরসাইকেল কারখানা গড়ে তুলে একে শিল্প হিসেবে বাড়তি সুবিধা দেওয়াও ভালো দিক নয়।’
গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের গণপরিবহণের ভালো বিকল্প তৈরি করতে পারেনি বলে মোটরসাইকেল বেড়ে যাচ্ছে। তবে মোটরসাইকেল অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাহন। এর দুর্ঘটনায় শরীরের ক্ষয়ক্ষতি ৩০ শতাংশ বেশি হয়।’
ঢাকায় প্রথম রাইড শেয়ারিং চালু করেছিল শেয়ার এ মোটরসাইকেল (স্যাম)। স্যামের প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ কাশেম বলেন, ঢাকার বাইরের মোটরসাইকেল বন্ধ করে নয়, বরং ভাড়া কমিয়ে দিলেই চালকরা এ পেশা থেকে সরে যাবে। তখন শুধু ঢাকার ভেতরের মোটরসাইকেলগুলোই চলবে।