রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুদ্ধ ঘোষণার সামিল : পুতিন

0 0
Read Time:6 Minute, 44 Second

ইউক্রেনে হামলার চালানোর জেরে রাশিয়ার ওপরে পশ্চিমা নানা দেশ যে নিষোধাজ্ঞা আরোপ করেছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মনে করছেন তা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল।

 

“তবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে সত্যিকার অর্থে সেরকম কিছু ঘটেনি,” তিনি বলছেন।

 

পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের আকাশসীমার উপরে বিমান চলাচল বন্ধ বা ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা দিলে সেটিকে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কেউ যদি এমন করে তবে তাকে শত্রু হিসেবেই জবাব দেয়া হবে।

 

 

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স এরোফ্লোটের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সফরকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

 

“বর্তমান নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে যে তারা যে পথে এগোচ্ছে, সেই পথেই যদি এগোতে থাকে তাহলে তারা রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে ফেলবে,” মন্তব্য করেছেন পুতিন।

 

রাশিয়াতে মার্শাল ল বা জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হবে কিনা এমন ধারণা নাকচ করে দিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, সামরিক কর্মকাণ্ড রয়েছে এমন নির্দিষ্ট কোন জায়গার বাইরে থেকে আগ্রাসনের ঘটনা ঘটলে শুধুমাত্র তখনই এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

“কিন্তু এমন পরিস্থিতি এখন নেই।

 

আমি আশা করছি এমন কিছু হবে না। ”

পুতিন মার্শাল ল ঘোষণা করবেন এবং রাশিয়ার সরকারি কার্যক্রম সেনাবাহিনীর অধীনে চলে যাবে এমন গুজব তৈরি হয়েছে।

 

দিন দশেক আগে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করা, বিদেশে পুতিনের যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলো জব্দ করা।

 

এছাড়া বিভিন্ন আন্তঃদেশীয় কোম্পানি রাশিয়াতে কার্যক্রম বন্ধ অথবা সীমিত করেছে। সর্বশেষ শনিবার স্যামসাং, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভিসা, মাস্টারকার্ড, পেপ্যাল এবং পোশাক বিক্রেতা কোম্পানি জারা রাশিয়াতে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।

 

নিষেধাজ্ঞার অর্থনৈতিক প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে রাশিয়ার উপরে। রাশিয়ান মুদ্রা রুবলের মূল্য পড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূদের হার দ্বিগুণ করেছে।

 

ভ্লাদিমির পুতিন তার সর্বশেষ মন্তব্যে ইউক্রেনে কেন রাশিয়া হামলা চালিয়েছে তার পক্ষে যুক্তি দেবার চেষ্টা করেছেন।

 

এসব যুক্তি তিনি অবশ্য এর আগেও দিয়েছেন যে, তিনি ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় ‘বেসামরিকীকরণ ও ইউক্রেনকে নাৎসি মুক্ত’ করতে চেয়েছেন।

 

ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান যতটা সফল হবে বলে পুতিন আশা করেছিলেন, আসলে সেরকম হয়নি, পশ্চিমা সামরিক বিশেষজ্ঞদের এমন বিশ্লেষণ নাকচ করে দিয়ে মি পুতিন বলেছেন, “আমাদের সেনাবাহিনী তার দায়িত্ব সম্পন্ন করবে। সে নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সবকিছু সেভাবেই এগোচ্ছে। ”

 

ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের তলব করা হয়েছে এবং তারাও ইউক্রেনে রয়েছেন এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে শুধু পেশাদার সেনারাই অভিযানে অংশ নিচ্ছে।

 

ওদিকে সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

 

শনিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। যুদ্ধ সম্পর্কিত তাদের আলোচনা তিন ঘণ্টা দীর্ঘ হয়েছে।

 

এরপর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ-এর সাথে দেখা করতে মি. বেনেট মস্কো থেকে বার্লিন গেছেন। ইহুদি ধর্মীয় রীতি ভঙ্গ করে এই ভ্রমণ করেছেন গোঁড়া ইহুদি ওলাফ শলৎজ।

 

পোল্যান্ড-ইউক্রেনের সীমান্তে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে তার প্রশংসা করেন ব্লিংকেন।

 

কুলেবা ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা সহ নেটোর পক্ষ থেকে আরও সহায়তা পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।

 

অন্যদিকে ইউক্রেনের আকাশসীমাকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা না করায় নেটোর কঠোর সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি।

 

বেশ আবেগপূর্ণ এক ভাষণে তিনি বলেছেন, যুদ্ধে হস্তক্ষেপে নেটোর অনীহা ইউক্রেনের গ্রাম ও শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যেতে রাশিয়াকে এক ধরনের অনুমোদন দিচ্ছে।

 

সূত্র: বিবিসি

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *