রাশিয়ার কাছ থেকে কী চায় ভারত

0 0
Read Time:11 Minute, 17 Second

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ২০২২ সালের সবচেয়ে উদ্ধৃতযোগ্য মন্তব্যের জন্য যদি পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে সেই দৌড়ে একেবারে সামনের কাতারে থাকবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস কে জয়শঙ্কর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় গত জুন মাসে স্লোভাকিয়ায় নিরাপত্তা ফোরামের এক বক্তৃতায় জয়শঙ্কর বলেন, ‘ইউরোপীয়রা এমন এক মনোভঙ্গি নিয়ে বেড়ে উঠেছেন যে তাঁরা মনে করেন, ইউরোপের সমস্যাই বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু বিশ্বের সমস্যা ইউরোপের সমস্যা নয়।’

অন্যান্য প্রধান সমস্যার মতো যুদ্ধও আমাদের যুগের সব আলোর ওপর ছায়া ফেলেছে। তবে এ যুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবস্থান আলোকবর্তিকার মতোই। ইউক্রেন ঘিরে সংঘাত বিশ্বে বি-বিশ্বায়নের প্রবণতা কতটা প্রবল করেছে, ভারতের বর্তমান বিদেশনীতি তার একটা দৃষ্টান্তমাত্র। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা বনাম চীন ও এর প্রধান উপগ্রহ রাশিয়া—বিশ্ব প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে বিভক্ত। এ রকম দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে বেরিয়ে বিদেশনীতির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে ভারত ‘কৌশলগত স্বাধিকার’-এর ওপর জোর দিয়ে আসছে। ভারতের বর্তমান অবস্থান এ নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। এর সারমর্ম হলো, ভারত একটি আত্মনির্ভরশীল ও বহুমাত্রিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এর অর্থ হলো, দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধের নীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখা এবং বিশ্বপরিসরে বহুমাত্রিক সম্পর্কের মাধ্যমে সুবিধা আদায় করে নেওয়া।

ইউরোপের রাজনীতিকেরা এখন রাশিয়ার জ্বালানি থেকে নির্ভরতা কমাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে। এ অবস্থায় মস্কো থেকে বেশি বেশি তেল কিনছে ভারত। এ কারণে তাঁরা ভারতকে সমালোচনায় বিদ্ধ করছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, জুলাইয়ের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে গড়ে প্রতিদিন ১১ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনেছে ভারত। দেশটির মোট জ্বালানি তেলের ৫ ভাগের ১ ভাগ এখন আসছে রাশিয়া থেকে। গত বছরে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২ শতাংশ।

এ বিষয়ে ভারত সরকারের কূটনৈতিক অবস্থান হলো, রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সত্ত্বেও ইউরোপ মস্কোর সঙ্গে যে পরিমাণ জ্বালানি-বাণিজ্য করছে, তার তুলনায় ভারতের বাণিজ্য একেবারেই কম। এ বক্তব্যকে আরেকটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যাক। রাশিয়ার সস্তা তেল কেনার মধ্য দিয়ে ভারত সম্ভবত ইউরোপকে আরও বড় ধরনের অর্থনৈতিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছে। গত বছর রাশিয়া পশ্চিমাদের কাছে প্রতিদিন গড়ে ৪৩ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল (পরিশোধিত-অপরিশোধিত মিলিয়ে ৬০ লাখ ব্যারেল) বিক্রি করেছিল। এ কারণে রাশিয়া এবার তেল বিক্রির জন্য ভারতের মতো বিকল্প বাজার না পেলে বিশ্বে তেলের দাম আরও বাড়ত।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *