রিফাত হত্যার আগের দিনও নয়নের বাসায় যান মিন্নি

0 0
Read Time:6 Minute, 16 Second

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নির সাথে প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের সম্পর্কের বিষয়টি দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগমের আজ একটি অনলাইনকে দেয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে জানান, রিফাত হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়েছিলেন নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

শাহিদা বেগম বলেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২৬ জুন (বুধবার)। এর আগের দিন মঙ্গলবারও মিন্নি আমাদের বাসায় এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করে।’

‘আমার ছেলে তো মারাই গেছে। আমার তো আর মিথ্যা বলার কিছু নেই। মিন্নি যে মঙ্গলবারও আমাদের বাসায় এসেছিলো তা আমার প্রতিবেশীরাও দেখেছে।’

নয়ন বন্ডের মা আরও বলেন, ‘শুধু হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মঙ্গলবারই নয়; রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরও মিন্নি নিয়মিত আমাদের বাসায় এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করতো। মোটরমসাইকেলে মিন্নিকে রিফাত শরীফ কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যেত। এরপর মিন্নি আমাদের বাসায় চলে আসত। আবার কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে মিন্নি আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যেত।’

রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নি জড়িত দাবি করে নয়নের মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের খবর পাওয়ার পর আমি আমার ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি, যোগাযোগ না রাখতে। কিন্তু আমার ছেলে নয়ন কখনও আমার কথা শুনত না। ওর মনে যা চাইতো ও তা-ই করত। নয়ন যদি আমার কথা শুনত তাহলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটত না।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো রামদা দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপ দিতে থাকে দুই যুবক। ওই সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই যুবককে বারবার প্রতিহতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঘটনাটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওতে যে দুই যুবককে দেখা যায় তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং আরেকজন রিফাত ফরাজী। তারা ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এসব ঘটনায় তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

রিফাত হত্যাকাণ্ডের পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জুন মিন্নি গণমাধ্যমের কাছে কাঁদতে কাঁদতে দাবি করেন, আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি আমি। আমি তাদের বিচার চাই।

কিন্তু গত শনিবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। সেখানে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে ও পরে মিন্নির আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়।

ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় ভিডিও ফুটেজটির ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে দেখা যায়, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১০-১২ জন রিফাতকে মারধর করতে করতে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে বের হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন পেছন থেকে রিফাতকে ধরে রেখেছে। বাকি দুজন দুই হাত ধরেছে। মিন্নিকে দেখা যায় পার্স হাতে স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল। একবার ডানেও তাকিয়েছেন কলেজের দিকে।

রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নিয়মিত নয়ন বন্ডের বাসায় আসা-যাওয়া এবং হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও নয়ন বন্ডের বাসায় যাওয়ার বিষয়ে শনিবার সকালে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের ফোনে কল দিয়ে মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিন্নি অসুস্থ। গতকাল তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। মিন্নি এখন ঘুমাচ্ছে। তাই মিন্নি কথা বলতে পারবে না।’

এছাড়া মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে হলে বরগুনা জেলা পুলিশের অনুমতি লাগবে বলেও জানান তিনি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %