সিজদাতুস সাহু বা সিজদায়ে সাহু। সাহু সিজদা অর্থ ভুলের সিজদা। নামাজে ভুলে কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দিলে— সিজদায়ে সাহু দিতে হয়। শুধু দিতে হয় না— তখন সিজদায়ে সাহু দেওয়া ওয়াজিব। মূলত ওয়াজিব ছুটে যাওয়াটাই সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার কারণ।
নামাজে সাহু সিজদা দিতে হয় কেন?
কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে— কারণ, সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার অপূর্ণতা পূর্ণ করা হয়।
সিজদায়ে সাহু কখন দিতে হয়? কেন দিতে হয়? এবং দেওয়ার নিয়ম কী— এর সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
হাদিসে সাহু সিজদা
আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহায়নাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক নামাজে আল্লাহর রাসুল (সা.) দু্ই রাকাত আদায় করে— না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লিরাও তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তার সালাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তার সালাম ফেরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফেরানোর আগে তাকবির বলে বসে বসেই দুইটি সিজদা করলেন। অতঃপর সালাম ফেরালেন। (বুখারি, হাদিস : ৮২৯; মুসলিম, ৫/১৯, হাদিস : ৫৭০; আহমাদ, হাদিস : ২২৯৮১)
অন্য বর্ণনায় আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহায়নাহ্ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) জোহরের দু্ই রাকাত আদায় করে দাঁড়িয়ে গেলেন। দু্ই রাকাতের পর তিনি বসলেন না। সালাত শেষ হয়ে গেলে তিনি দুইটি সিজদা করলেন এবং অতঃপর সালাম ফেরালেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৫২; ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
আবদুল্লাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) জোহরের পাঁচ রাকাত আদায় করলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, নামাজ কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন কেন? (প্রশ্নকারী) বললেন, আপনি তো পাঁচ রাকাত আদায় করেছেন। অতএব তিনি সালাম ফেরানোর পর দুইটি সিজদা করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৪০১)
নামাজে কখন সাহু সিজদা দিতে হয়?
♦ নামাজের কোনো ওয়াজিব আমল কেউ ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে, গুনাহগার হবে এবং নামাজও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ওই নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে। তখন সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে, নামাজ পূর্ণ হবে না।
♦ নামাজের কোনো ওয়াজিব কাজ ভুলক্রমে ছুটে গেলে, সিজদায়ে সাহু দেওয়া ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস: ৩৮৬; আবু দাউদ, হাদিস: ৮৭৪; আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৭৮০৮)
♦ ফরজের প্রথম দুই রাকাত বা যেকোনো এক রাকাতে সুরায়ে ফাতিহা পড়তে গেলে অথবা অনুরূপ নফল ও বিতরের যেকোনো রাকাতে ভুলক্রমে সুরায়ে ফাতিহা পড়া না হলে, সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৩)
♦ ফরজের প্রথম দুই রাকাতে কেরাত পড়া ভুলে গেলে, শেষ দুই রাকাতে তা পড়ে নেবে। তবে সিজদায়ে সাহু দেবে, নামাজের তারতিব বা ধারাবাহিকতা লঙ্ঘনের কারণে। (মুসলিম, হাদিস : ৮৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১/৪০৯)
♦ ফরজের দুই রাকাত বা এক রাকাতে কিরাত মেলাতে ভুলে গেলে— সাহু সিজদা দিতে হবে। (নাসায়ি: ১২৪৩)
♦ কেউ যদি এক সিজদা করে পরের রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তখন ওই রাকাত দুই সিজদা দিয়ে সম্পন্ন করে ছুটে যাওয়া সিজদাও এর সঙ্গে মিলিয়ে নেবে (এক রাকাতে তখন তিন সিজদা হবে)। শেষে সিজদায়ে সাহু করবে, এতে করে নামাজ হয়ে যাবে। (প্রাগুক্ত)
♦ যদি তিন বা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠক ভুলে যায়, তা ফরজ নামাজ হোক বা নফল নামাজ, সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৮২)
♦ তাশাহহুদ পড়তে ভুলে গেলে, সাহু সিজদা দিতে হবে। (নাসায়ি, হাদিস : ১২৪৩)
আরও পড়ুন : নামাজে রাকাতসংখ্যা ভুলে গেলে কী করবেন?
♦ বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর আগে কুনুত পড়তে ভুলে গেলে— সাহু সিজদা দিতে হবে। (বায়হাকি, হাদিস : ৪০৪২)
♦ প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের সঙ্গে দরুদ ইত্যাদি পড়ে ফেলে, তাহলে সাহু সিজদা দিতে হবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৫)
সাহু সিজদা যেভাবে দেবেন
সাহু সিজদার সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে— সাহু সিজদা যার ওপর ওয়াজিব হয়েছে, সে শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে ডান দিকে এক সালাম ফেরাবে। এরপর তাকবির বলে নামাজের মতো দুইটি সিজদা করে বসে যাবে এবং তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবে। সালামের আগে সিজদা করলে নামাজ হয়ে যাবে। তবে তা মাকরুহে তানজিহি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮১৮৮; বুখারি, হাদিস : ১১৫০-১১৫৩; তিরমিজি, হাদিস : ৩৬১)